আর নয় অপচয়

52

মাহবুবুর রহমান সুজন


প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব কিছুই অপচয়। জাতিগতভাবে অনেকেই অপচয়ে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। চলার পথে ব্যক্তিগত, প্রাকৃতিক কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় করে। অপচয় জঘন্য একটা অপরাধ। প্রত্যেক ধর্মে অপচয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআন, হাদিসে অপচয়কে নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। তবুও আমাদের অনেকেই অপচয়কে শৌখিনতা কিংবা বিলাসিতা মনে করে। দৈনন্দিন কাজে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদ যথা গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহার করি। ব্যবহার করি বললে ভুল হবে এসব ছাড়া তো জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব বলা চলে। আমরা আদৌও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে কতটা সাশ্রয়ী কিংবা সচেতনতার সাথে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করি ভেবে দেখেছি ! এই সম্পদের ও যে শেষ আছে, শেষ হলে কি হবে আমাদের অবস্থা কখনো ভেবে দেখেছি ? আমরা তা ভেবে তো দেখিই না উল্টো জীবাশ্ম জ্বালানীর যেনতেন ব্যবহার করা আমাদের দৈনন্দিন রুটিন। বিশ্ব বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশেও ধাপে ধাপে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমরা শুধু সরকারের ঘাঁড়ে দোষ ছাপাতে চাই। আমাদের অনেকেই মনে করি সরকারি গ্যাসের লাইন সারাদিন জ্বললেও যে বিল কম জ্বালালেও একই বিল তাই নানান অজুহাতে গ্যাসের অপচয় করি। কাপড় শুকানো, ম্যাচের কাটি বাঁচানোর নামে সারাক্ষণ চুলা জ্বালিয়ে রাখা, অহেতুক চুলা জ্বালিয়ে রাখা, পানি গরম দেওয়ার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি সিদ্ধ করা ইত্যাদি। বিদ্যুতের অপব্যবহার আমাদের দেশে খুবই বেশি হয়। অহেতুক লাইট/ ফ্যান জ্বলিয়ে রাখা, ঘর আলোকিত করার নামে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আলোকসজ্জা, দিনে বাতি জ্বালিয়ে রাখা, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের যেনতেন ব্যবহার ইত্যাদি। এই মৌসুমে অনেক গভীর নলকূপে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। যে কাজ এক বালতি পানি দিয়ে সারা যাবে সেখানে আমরা তিন/চার বালতি পানি নষ্ট করছি। চাষাবাদ করার সময়ও পানি সেচের সময় প্রচুর পানি অহেতুক নষ্ট করি।
সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত, গার্মেন্টস কিংবা শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানীর অপব্যবহার রোধ করতে সংশ্লিষ্টদের আরো জোর ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার টেকানো না গেলে ভবিষ্যতে খুব খারাপ সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। যার কিছুটা ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই অবলোকন হচ্ছে। মানুষের যে কয়টি মৌলিক চাহিদা রয়েছে তারমধ্যে খাদ্য প্রধান ও অন্যতম। দেশে এখনো অনেক মানুষ না খেয়ে দিন পার করে। যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার অপচয়ের প্রক্রিয়াটা পুরাতন। যে খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে অনাহারিরা সে খাবার তুলে খাওয়ার মতো দৃশ্য আমাদের চোখে পড়ে।
দেশের প্রতিটি পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অনেকে খুবই কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। অপচয় না করে তাদের কষ্ট লাগবে এগিয়ে আসা উচিত। বাজারের যে হারে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের আরো মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ পরিচালিত হয়। দেশে উন্নয়ন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ কিংবা প্রমাণ নতুন নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে প্রচুর সরকারি অর্থের ব্যয় হয়। ধরা যাক, একটি স্থানে ভূগর্ভে বিদ্যুৎ, গ্যাস কিংবা টেলিফোন সংযোগের কাজ সবে মাত্র শেষ হয়েছে, তার কিছুদিন পর একই স্থানে ওয়াসা কিংবা সিটি কর্পোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির শুরু করে তাদের স্ব স্ব প্রকল্পের। এতে মানুষের যেমন দুর্ভোগ হয় সংস্থা গুলোর সমন্বয়ের অভাবে অর্থেরও অপচয় হয়। সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বয় কিংবা তদারকির অভাবে অপচয় হয় প্রচুর অর্থ। সরকারি, বেসরকারি উচু পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের মালিক দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রের সম্পদের দেখাশোনা ও সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি জনগণের। ব্যাক্তিগত, প্রাকৃতিক কিংবা সরকারি সকল সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সকল নাগরিকদের নৈতিক দায়িত্ব।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখেছে। অসম্ভব সম্ভাবনার আমাদের এই দেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারের সফলতার কিংবা প্রাপ্তির ঝুড়ি বড়। সারা বিশ্ব সংকটময় মুহূর্ত পাড়ি দিচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বিভিন্ন বক্তব্যে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে খরচ পূর্বের তুলনায় কম বাজেটে করা হচ্ছে। এমনকি চলতি বছর ইফতার মাহফিল না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং দেশবাসীকে অনুরোধ ও জানিয়েছেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় দেশের অর্থনীতি সমুন্নত রাখতে সরকারী প্রচেষ্টার পাশাপাশি সকল জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অপব্যবহার রোধ করতে হবে। অপচয় দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, দ্রব্যমূল্য উধ্বগতি এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কারণে বিশ্বের ৫০ টির অধিক উন্নয়নশীল দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারীর মতো ধাক্কা সারা বিশ্বে নাড়া দিয়েছে। অনেক রাষ্ট্র অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে, হচ্ছে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর, বাসযোগ্য, নিরাপদ ও সুষ্ঠ দেশ বিনির্মানে অবদান রাখতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী- চট্টগ্রাম আইন কলেজ