আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়

33

নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে আর বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয় বলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর গত ১৮ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তবে মিয়ানমার সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই কাউন্সিলকে জানাতে চাই যে, মিয়ানমার থেকে আসা নতুন কাউকে আর বাংলাদেশে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়’। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় মিয়ানমার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেসব ছিল ‘ফাঁকা বুলি’। এ বিষয়ে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে তারা। একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি হয়নি কারণ সেখানে তাদের নিরাপদে বসবাস করার মত পরিস্থিতি মিয়ানমার এখনও তৈরি করেনি’।
মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের নাগরিকদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে আছে, যাচাই-বাছাই করে তাদের ফিরিয়ে নিতে তারা তৈরি আছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের ফেরার মত অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আর রোহিঙ্গারা বলছে, নিরাপত্তার পাশাপাশি নাগরিকত্ব ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল তারা ফিরে যাওয়ার কথা ভাববে। খবর বিডিনিউজের
গত বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে পশ্চিমা দেশগুলোর দিক থেকেও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে একই ধরনের পর্যবেক্ষণ এসেছে। জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত কারেন পিয়ার্স বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তারা অত্যন্ত হতাশ। শরণার্থীরা ফিরে যেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে এমন পরিবেশ অবশ্যই সেখানে নিশ্চিত করতে হবে’।
বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত এ অধিবেশনে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যেন নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক এবং সম্মানজনক হয়, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। কোনো শর্ত ছাড়াই জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে রাখাইনে গিয়ে তদন্ত করতে দেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার কথাও তারা বলেন।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন শ্রানার-বার্গেনার সভায় বলেন, রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশাধিকার এখন খুবই ‘সীমিত’।
আর কারেন পিয়ার্স বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ওপর যে মাত্রায় নিপীড়ন চালানো হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ সেখান থেকে এসেছে, তাতে ওই ঘটনা এ শতকের বর্বরতম ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে’।
তবে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে দুই মিত্র দেশ চীন ও রাশিয়াকে বরাবরের মতই পাশে পাচ্ছে মিয়ানমার। জাতিসংঘে চীনের উপ রাষ্ট্রদূত উ হাইতাও বলেন, এটা একেবারেই মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বিষয়। সুতরাং তাদেরকেই এর সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ দিতে হবে। চীনের প্রতিনিধির এমন বক্তব্যের সঙ্গে রশিয়ার দূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কিও সহমত প্রকাশ করেন।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাজ্য গত ডিসেম্বরে একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছিল, যেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমারকে একটি সময় বেঁধে দেওয়া হোক। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা বর্জন করে।