আরও ২১ হাজার আবেদন নিবে কেজিডিসিএল

45

মনিরুল ইসলাম মুন্না

দেশের অন্যতম গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) ৭৯ হাজার গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক। আরও ২১ হাজার মিটারের জন্য আবেদন জমা নেবে কেজিডিসিএল। তারপর এই এক লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনবে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে মিটার বসানোর সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি ঠিকাদার নিয়োগের কাজ।
কেজিডিসিএল’র একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের মধ্যে এক লাখ গ্রাহকের বাসায় প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ সম্পন্ন করতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে ‘আগে এলে আগে পাবেন’ নীতিতে প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হবে। যারা আগে আবেদন করেছেন, তারা আগে মিটার পাবেন। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগের পরপরই প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু হবে। সেটি কয়েক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার আশা করছেন তারা।
গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারের কারণে অনেক গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। আর গ্রাহকদেরও মাসে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ নন-মিটারে দুই চুলায় ১ হাজার ৮০ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এতে গ্রাহককে টাকা অনুপাতে গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।
গ্রাহক সুমি আক্তার বলেন, ‘গ্যাস ব্যবহার করি বা না করি, প্রতিমাসে এক হাজার ৮০ টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না। এভাবে মাসে ৩০০ টাকার গ্যাসও ব্যবহার করা হয় না। সে অনুপাতে হিসেব করতে গেলে প্রি-পেইড মিটারই ভাল হয়। কারণ যতটুকু ব্যবহার করব, তত টাকা হিসেবে আসবে। অতিরিক্ত কোন চার্জ আসবে না।
কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে আবাসিক গ্রাহক খাতে দৈনিক প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা গেলে অনেক গ্যাস সাশ্রয় হবে।
তথ্যমতে, কেজিডিসিএল’র নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় যথাসময়ে প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি। গত দুই-তিন মাস আগে টেন্ডার আহŸান করা হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো ঠিকাদার নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে পরবর্তীকালে আবার রি-টেন্ডার করা হয়েছে। এখনো ঠিকাদার চ‚ড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, বর্তমানে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে আবাসিক সংযোগ রয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮টি। শুধু আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এক লাখ প্রি-পেইড মিটার প্রকল্পের পর আরেক প্রকল্প গ্রহণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। পর্যায়ক্রমে আবাসিকের সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান। এখন মহানগর এলাকার বাসিন্দাদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। পরে নগরীর বাইরের আবাসিক গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। এতে সাশ্রয়কৃত গ্যাস অন্য খাতে ব্যবহার করা যাবে।
এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে ২০২১ সালের ১৮ মে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছর কোনো কাজ করতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন এবং সাময়িক বহিষ্কারও হন। এ ঘটনায় কয়েক মাস প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি। পরে দায়িত্ব পান উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. নাহিদ আলম। বর্তমানে প্রকল্পটি তিনি দেখভাল করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হলেও, এবার আর তা করা হচ্ছে না। দ্বিতীয় পর্যায়ে নগরীর যেকোনো এলাকার গ্রাহকই অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ নিতে পারবেন।