আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬১৯ মিটার বাঁধ

75

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পানির ধাক্কায় উপকূল রক্ষাকারী বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে বাঁশখালী ও আনোয়ারা এলাকায় বাঁধে বড় ধরনের ছোবল মেরেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। আম্পানের প্রভাবে আনোয়ারায় লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। বাঁশখালীতে কমপক্ষে তিনটি স্পটে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুই উপজেলায় এখনো ঝুঁকিতে আছে পাঁচ হাজার ৬১৯ মিটার বাঁধ। যার বেশিরভাগই মাটির বাঁধ। কয়েক ধাপে এসব এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ হলেও স্থায়ী বাঁধ না হওয়ায় ঝুঁকিতে আছে উপকূলের মানুষ।
পাউবো সূত্র জানায়, আনোয়ারা অংশে এখনো ২১৫০ মিটার বাঁধ অরক্ষিত আছে। যেখানে আগে বিভিন্ন সময় জরুরী ভিত্তিতে মাটি ও বালির ব্যাগ ফেলে কাজ করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘর, ফকিরহাট ও সারেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বাঁশখালীর গন্ডামারায় ১২৬০ মিটার, খানখানাবাদ কদমরসুল এলাকায় ৬০ মিটার, ছনুয়ায় ১৯৭০ মিটার, নদী অংশে রাতাখোর্দ্দ এলাকায় ১৫০ মিটার, বৈলগাঁওয়ে ২৯ মিটার এলাকায় মাটির বাঁধ আছে। এসব বাঁধে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবলে মারাত্মকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘আনোয়ারায় ৩২০ কোটি টাকার যে কাজ চলছে তার সাথে আরো ২১৫০ মিটার কাজের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যা একনেকে আটকে আছে। একনেক অনুমোদন দিলেই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হবে ৫৭০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে প্রকল্প নেয়ার সময় সেখানে ঝাউবাগান থাকায় প্রকল্পে ঢুকানো হয়নি। সেখানে মাটির বাঁধ ছিল। যা সাগরে জোয়ারের তোড়ে টিকেনি। আগামী বছর আনোয়ারার লোকালয়ে পানি ঢুকবে না। তার আগেই কাজ শেষ করা হবে।’
বাঁশখালীর দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী বেড়িবাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এবার বাঁশখালী উপকূলের কোন অংশে লোকালয়ে পানি ঢুকেনি। কিছু কিছু স্থানে যেখানে মাটির বাঁধ আছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা জরুরী ভিত্তিতে সেখানে কাজ করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। উপকূলের বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৪৬৯ মিটার এলাকায় বাঁধ নির্মিত হবে।’
সূত্র জানায়, আনোয়ারা এলাকায় পাউবোর আওতাধীন পোল্ডার নং ৬২ (পতেঙ্গা), ৬৩/১ এ (আনোয়ারা) এবং ৬৩/১বি (আনোয়ারা ও পটিয়া) উপকূলে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩২০ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের আওতায় বাঁঁধ, ডাইক পুনরাকৃতিকরণ, মেরামত ও উচ্চতা উন্নীতকরণ ৬৪.৩২৯ কিলোমিটার, নদী তীর, সী-ডাইক সংরক্ষণ ৯.৫৫ কিলোমিটার, ডাইক ¯েøাপ প্রটেকশন ০.৭০০ কিলোমিটার, তীর সংরক্ষণ মেরামত কাজ ১.৩৯৩ কিলোমিটার, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্বাসন ২৪টি, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ ১১টি, খাল পুনঃখনন ১৪.৬৯০ কিলোমিটার, এপ্রোচ বাঁধ ও ক্লোজার নির্মাণ (খাল ৮টি), ০.৩১০ কিলোমিটার, ক্লোজার নির্মাণ ০.১২০ কিলোমিটার, ভূমি অধিগ্রহণ ৫.০০ হেক্টর, ড্রেজিং ২.৪০০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের বাইরে আরও ২১৫০ মিটার বাঁধ অরক্ষিত আছে। যে অংশ দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
বাঁশখালী উপজেলায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা হ্রাস, সেচ সুবিধা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস ও আর্থ সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে ২০১৫ সালে শুরু হয় উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ। উপজেলার পাউবো পোল্ডার নং- ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি ঘিরে বাঁধের (সী ডাইক) ডাল সংরক্ষণসহ ব্রীচ ক্লোজিং ও পুনরাকৃত্তিকরণ ৬.২৯৬ কিলোমিটার, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ ৩.৮৪৮ কিলোমিটার, বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ ৫.৬০৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতোমধ্যে বাঁধের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ উপজেলায় এখনো ৩৪৬৯ মিটার বাঁধ অরক্ষিত আছে। যেসব স্থানে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে মাটির বাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ পূর্বদেশকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ছনুয়ায় মাটির বাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচুর এলাকা এখনো অরক্ষিত আছে। বড় ধরনের জলোচ্ছ¡াস হলেই লোকালয়ে পানি ঢুকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান কাজ দ্রæত শেষ করা প্রয়োজন।’