আমি রাস্তার উপর একটি দোকানও বরাদ্দ দেইনি

66

সিএনএ রিপোর্ট

শেরশাহ, তারাগেট ও টেক্সটাইল এলাকার উচ্ছেদকরা স্থানে পুনরায় দোকান নির্মাণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজন বলেছেন, আমি কাউকে রাস্তার উপর একটি দোকানও বরাদ্দ দেইনি। আমি বিদায় নেয়ার পর সিটি কর্পোরেশন কাদের এসব জায়গা বরাদ্দ দেবে এবং ভাড়া কত হবে তা ঠিক করে সাধারণ সভায় (জিএম) পাস করিয়েছে।
শেরশাহ তারাগেট ও টেক্সটাইল এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে খোরশেদুল আলম সুজন বলেন, নগরীর শেরশাহ ও টেক্সটাইল এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে অবৈধ দখলদাররা মূল সড়ক দখল করে রেখেছিল। সেখানে পথচারী চলাচলের কোন উপায় ছিল না। সিটি কর্পোরেশন এ এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। আ জ ম নাছির উদ্দিন চসিকের মেয়র থাকাকালীন সময়ে শেরশাহ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় সন্ত্রাসী পানি জসিমের হামলার শিকার হয়েছিল। এরপর আর কেউ অভিযান পরিচালনা করতে যাননি। তিনি বলেন, আমি চসিকের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন থেকে আমাকে জানানো হয় শেরশাহ’র এই রাস্তাটি এডিপির উন্নয়ন তালিকভুক্ত। আমরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি করতে না পারি তাহলে উন্নয়ন প্রকল্পটি ফেরত দিতে হবে। প্রকল্প ফেরত গেলে বড় সমস্যা হচ্ছে- ১০ কোটি টাকার প্রকল্প ফেরত গেলে পরবর্তী এডিপিতে ২০ কোটি টাকা কম আসবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায় আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানতে চাই। তারা আমাকে জানান,এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল সমস্যা হচ্ছে অবৈধ দখলদার এবং তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। উচ্ছেদ অভিযানের সময় এসব অবৈধ দখলদাররা স্থানীয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উচ্ছেদে বাধাগ্রস্ত করে। এরপর আমি অবৈধ দখলদারদের সাথে কথা বললাম এবং তাদেরকে সড়কটি ছেড়ে দিতে বলি। তারা আমার কথা শুনেনি। পরবর্তীতে একদিন আমি স্কুটি নিয়ে সেখানে গেলাম এবং অবৈধ দখলদারদের পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দিই। এরপর আমি বিট পুলিশ, র‌্যাব, আনসার এবং চসিকের কর্মচারীদের নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে চসিকের দখলে নিই। তখনও কিছু লোক আমাদের বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছিল। চসিক ওই সড়ক দখলে নেওয়ার পর আমাদের কর্মচারীরা সেখানে কাজ করতে গেলে অবৈধ দখলদারা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতো। সব সময় তো আর পুলিশ নিয়ে গিয়ে কাজ করা সম্ভব না। তাই আমরা একটি প্রশাসনিক বুদ্ধি খাটালাম। তা হচ্ছে- আমি অবৈধ দখলদারদের বললাম, যারা আমাদের কাছে সহযোগিতা করবে, রাস্তা ড্রেন নির্মাণ হওয়ার পর যদি জায়গা থাকে সেখানে অথবা তোমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করবো। এই ঘোষণার পর অবৈধ দখলদাররা দু’টি পক্ষ হয়ে গেল এবং বড় পক্ষ আমাদের সহযোগিতা করেছে। এরপর সহজে আমরা কাজটি সম্পন্ন করে ফেলেছি। এদিকে, কাজ শেষ করতে করতে আমার প্রশাসকের মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছিল।
শেরশাহ ও তারাগেট এলাকায় ফুটপাতের উপর দোকান বরাদ্দ দিয়েছিলেন বলে সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হচ্ছে। ‘আইন অমান্য করে আপনি কি ফুটপাতের উপর দোকান বরাদ্দ দিতে পারেন’- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি অফিসারদের ডেকে বললাম, যাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন করবো বলে ওয়াদা করেছি। শেরশাহ এলাকায় কাজ করার পর যদি অতিরিক্ত জায়গা থাকে অথবা অন্য কোথাও যেন তাদের পুনর্বাসন করা হয়। এটা আমার একটি প্রস্তাব ছিল, কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এরপর ২০২১ সালের ১ ফেব্রæয়ারি চসিকের প্রশাসকের দায়িত্ব ছেড়ে আমি চলে আসি। ৯ ফেব্রæয়ারি চসিকের রাজস্ব শাখা প্রকৌশল বিভাগকে জায়গা চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেন। ৯ তারিখের পর থেকে প্রক্রিয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এরপর এপ্রিলের দিকে জায়গা চিহ্নিত করেছে। কাদের এসব জায়গা বরাদ্দ দেবে এবং ভাড়া কত হবে তা ঠিক করে সাধারণ সভায় (জিএম) পাস করিয়েছে। জিএম এ পাস করানোর পর সিটি কর্পোরেশন দোকান বরাদ্দ দিয়েছে। এখানে প্রশাসকের দায় কোথায় আপনারা বলেন?
সাবেক প্রশাসক আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশন প্রমাণ করুক, আমি কাউকে রাস্তার উপর একটি দোকান বরাদ্দ দিয়েছি। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি সারা জীবনের জন্য রাজনীতি ছেড়ে দিব। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজগুলো করেছি। আমি অনেক ফুটপাত অবমুক্ত করেছি, এসময় অনেকে আমাকে খারাপ বলেছে। এখন একটি জায়গাও নেই। ফুটপাতের উপর নতুন নতুন দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।
‘যেখানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছিলেন সেখানে আপনি কি চান আবার আইন না মেনে দোকান দেয়া হোক’-এর জবাবে সাবেক প্রশাসক বলেন, এ কে খান এলাকায় ফুটপাত দখল করে দোকান বসেছে। নিউ মার্কেট, রিয়াজ উদ্দিন বাজার এলাকায় ফুটপাত সম্পূর্ণ দখল হয়ে আছে। নিউ মার্কেট থেকে স্টেশন রোডে তিন লেয়ার করে ফুটপাত দখল করে রেখেছে। রাস্তায় হাটার জায়গা নেই। আমি প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় নিজে হেঁটে হেঁটে ফুটপাত দেখেছি। চট্টগ্রাম শহরের অনেক ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করেছি। উনার (মেয়রের) একটি স্বভাব হয়েছে, অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া। আমি প্রশাসকের দায়িত্ব ছেড়েছি নয় মাস হয়েছে। যুক্তির খাতিরে আমি ধরে নিলাম প্রশাসক বলেছে ফুটপাতে দোকান বরাদ্দ দেয়ার জন্য। আমার আদেশ তো আর আইন কিংবা কোরআনের বাণী নয় যে, তা পরিবর্তন করা যাবে না বা বাতিল করা যাবে না। জিএম এর মাধ্যমে মেয়র এটা বাতিল করে দিতে পারেন।
‘বর্তমান মেয়র আপনার দোহাই দিয়ে ফটপাতের উপর দোকান বরাদ্দের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি এবং মেয়রের কাছে আপনার প্রত্যাশা কি’ জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি মনে করি ফুটপাতের উপর দোকান নির্মাণ করা অন্যায়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ৬ মাস বা ১৮০ দিন প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরমধ্যে আমি চার মাস দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। এক মাস করোনা আক্রান্ত এবং এক মাস ছুটিতে চলে গিয়েছে। এই চার মাসে যতটুকু পেরেছি নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত করেছি।
আমি বলবো, হয়তো মেয়র সাহেবকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে বা তিনি ভুল বুঝেছেন। অথবা উনাকে ব্যবহার করে কেউ নিজের স্বার্থ হাসিলের কাজ করছে। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলছি, কোনো গাছ কেটে, ফুটপাত দখল করে কিংবা রাস্তা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের জন্য আমি কোন বরাদ্দ দিইনি।