‘আমি মানি না কো কোন আইন’-৪

167

মূত্রকীর্তির যে তাণ্ডব দেখলাম, মনে ঘেন্না ধরে গেল। কি আশ্চর্য, মন্ত্রী নিজের বউয়ের কপালে বন্দুক ধরে গায়ে হিসু করে দেন! ওমা- এটি আবার কি রোগ? উপরে ধরা নীচে ছাড়া- হাহাহা ডেঞ্জেরাস!মন্ত্রীরযদি রুচিবোধ না থাকে, জনতার থাকবে কোত্থেকে? মনে হয় কথা ঠিক হয়নি, আসলে জনতা আইন মানে, মানেন না নেতারা। কদিন আগে দেখলাম ফেনীর সাংসদ নিজাম হাজারী, মাগো নাম শুনেই ভয় হয়Ñ কেন তা পরে বলছি, ঘরে যাতায়াতের মত জেলখানায়ও যাতায়াত করেন। মাশাল্লাহ্ কি ক্ষমতা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তাঁর পর্যন্ত ক্ষমতা নাই বিনা অনুমতিতে সেখানে ঢুকার। অথচ তিনি নিজগৃহে প্রবেশের মত ঢুকেন আর বের হন, নো টেনশন। অবশ্য তাঁর ক্ষমতার উৎস তাঁর নামের মধ্যেই নিহিত, হাজারী শন্দ শুনেই মানুষ নিহত হয়ে যায়। এক সময় ফেনীর জয়নাল হাজারীর নাম শুনলে নাকি মানুষ ভয়েমুতে দিত। ও খোদা মুতের নাম নিব না বলে আবার নিয়ে নিলাম, মুত দেখি আমাকে ছাড়বে না। থাক মূত্র তো পবিত্র, সমস্যা নাই মূত্র ছাড়া গতি নাই। হাজারীর নামে যে মাহাত্ম্য মন্ত্রীর নামে তা নাই। স্মরণ করুন সম্রাট আকবরের মনসবদারদের প্রতাপ, কি দাপট ছিল মোগল স¤্রাটদের একেকজন মনসবদারের। দশ হাজারী মনসব, বিশ হাজারী মনসব, অর্থাৎ একেকজন মনসবদারের অধীনে দশ হাজার, বিশ হাজার সেনাবাহিনী থাকত। সেখান থেকেই হয়েছে এই হাজারী নামের উৎপত্তি। দশ হাজার সৈনিক বাদ দিন, একজন মন্ত্রীর পেছনে দশজন পুলিশও থাকেনা। সুতরাং মন্ত্রী কিভাবে হাজারীর সমকক্ষ হবেন? কি শৌর্য-বীর্য-ঐশ্বর্য হাজারীদের, সেস্মৃতি কি ভুলাযায়, আদা পঁচলে কি ঝাঁজ যায়? শুধু হাজারী নয়, তাঁর মামুলী চামচা পর্যন্তকারানিরাপত্তা সেলে ঢুকে আসামীকে চিৎ করার হুমকি দেয়। অতএব আমি মানিনাকো কোন আইন- ৪, করে দেবে জগতের বার। হাজারীকে আর না ঘাঁটি চলুন এবার অন্যপথে হাঁটি। নইলে মোদের জীবন হবে মাটি, কারণ তিনি মানুষ অতি খাঁটি।
১৯৮৩ হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বব হক অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কন্যা ডিলনকে তাঁর দলের নেতা ল্যান্ডেরিও তিনবার ধর্ষণ করেছিল। নিজের রাজনৈতিক জীবনের ক্ষতি হবে বলে বাবা হয়েও কন্যাকে পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করতে নিষেধ করেছিলেন হক। ভেবে দেখুন রাজনীতি কি জিনিস? এখন তো তাহলে কর্মীরা নেতার কন্যাকে ধর্ষণ করা শুরু করবে, কারণ সেখানে কোন এ্যাকশন নাই, হাহাহা। আশ্চর্য, যে সময় ল্যান্ডে হকের কন্যাকে ধর্ষণ করেছে সে সময় হক সে দেশের প্রধানমন্ত্রী! মনে পড়ছে গ্রাম্য মাতবরের লাম্পট্যের চিত্র। মাতবর টাকার লোভ দেখিয়ে গরীব চাষার সুন্দরী মেয়েকে দিনের পর দিন ভোগ করে। টাকার কারণে চাষা কোন প্রতিবাদ করেনা, মেয়েকেও প্রতিবাদ করতে দেয় না। চাষা না হয় অসহায় তার অনেক দুর্বলতা আছে।
টাকার কাছে, ক্ষমতার কাছে সে অতি দুর্বল তাই সে হীনবল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো পুরা সবল, ক্ষমতা তাঁর সম্বল, অর্থশক্তি প্রবল, জীবনে অতি সফল, সর্বদিকে তাঁর মহাকর্ষবল। তবে এ্যাকশনে তিনি কেন এত বিকল? গ্রাম্য মাতবর চাষার মেয়েকে ভোগ করে, আর এখানে হয়ে গেল গোটা উল্টা! চাষা ভোগ করছে মাতবরের মেয়েকে?
হাহাহাহা, সুতরাং বুঝা যাচ্ছে ক্ষমতা থাকলেই আইন প্রয়োগ করা যায় না। ক্ষমতার দাপটে আইন প্রয়োগ করতে গিয়েও অনেক সময় চরম ফাইন দিতে হয়। তাই আইন মানাও এত সহজ নয়, ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দের মত আইনে গিয়া হবে বে-লাইন। যার চিন্তা সে করে তাই মনেহয় হক আইনি ঝামেলায় যাননি। কিন্তু ল্যান্ডে মাত্র তিনবার করে ছেড়ে দিল কেন, তিনবারে কি সাধ মিটে গেল, না আগ্রহ হারিয়ে ফেলল? আসলে মানুষ তো এ্যাডভেঞ্চারাস, সে বন্যকে বশ মানায় নম্যকে কষ বানায়। ল্যান্ডেরিও যখন দেখল ডিলন রসকষহীন, এ্যাকশন রি-এ্যাকশন কিছু নাই, তখন নিজ থেকেই ক্ষেমা দিল। নয় তিনশ বার করলেও কি হত? যে তিনবারে কিছু করে না, সে তিনশ বারেও কিছু করে না, হাহাহা।
ল্যান্ডে ভাবল তিনবার ধর্ষণ করার পরও যার মাঝে কোন ক্রিয়া নাই, বাদ-প্রতিবাদ কিছু করে না, তাকে ধর্ষণ করে মজা নাই। সে একটি রোবট, ধরলেই চলে আসে তাকে কি পৌরুষ দেখাবে? সেখানে কোন বীরত্ব নাই তাই কোন সাধ নাই। সম্ভবত এ কারণে ল্যান্ডে ডিলনে আগ্রহ হারিয়েছে। কিন্তু বব মনে হয় পুরানা গারলী = ওঝা। ডিলন যখন ল্যান্ডের ধর্ষণের কথা ববকে জানাল বব তাকে শান্ত থাকতে বললেন। কারণ তিনি জানেন, উপায়েন হি যচ্ছক্যং ন তচ্ছক্যং পরাক্রমৈঃ; কলে যা হয় বলে তা হয় না, তা তিনি ভালই রপ্ত করেছেন। সম্ভবত তাই মেয়েকে তিনি; ‘শোন মাতুই চুপ থাক দেখবি বেটা এমনিই অফ হয়ে যাবে। হারামজাদাকে আমি তো চিনি, সে নড়লে খায় মরলে যায়। তাই তাকে চেতালে ধরে নেতালে সরে। ক্ষেপালে সরব ঝিমালে নীরব, ফলে তুই একদম ঝিম মেরে থাকবি দেখবি বেটা নিজেই সরে গেছে।’ দেখাগেল হয়েছেও তাই, বেটা আর ধরে নাই। সুতরাং গুরু কে? ববই গুরু, হাহাহাহা। ওস্তাদের মার শেষরাতে, কি দরকার এত ঝামেলার? অতএব মানি নাকো কোন আইন- ৪, ঝামেলার নাই কোন দরকার। মেয়েকে নাহয় একটু চেখেছে বিনিময়ে সে প্রধানমন্ত্রীত্ব পেয়েছে। অলাভ কি হয়েছে? আমাদের দেশেও এমন অনেকেই করেছে। ১৯৮০’র দশকে অনেকে তাঁদের বউ-বেটিকে আমাদের তৎকালীন চিরতরুণ রোমান্টিক রাষ্ট্রপতিকে খুশী করতে উপঢৌকন পেশ করতেন। তিনি সেসব উপঢৌকন পেয়ে অতি পরিতৃপ্ত হতেন। সুতরাং ইহারা যদি ন্যূনরাষ্ট্রিয় আনুকূল্য পেতে এত উপঢৌকন পেশ করতে পারে, গোটা রাষ্ট্রিয় প্রাধান্য পেতে উহা নিজকন্যাকে উপঢৌকন পেশ করতে দোষ কি? অতএব আইন ন্যায়নীতির কেউ ধারেনাকো কোন ধার, সবাই মানে শুধু যার যেটুক দরকার।
আসলে পৃথিবীটাই স্বার্থের কাছে বিকে গেছে, সবাই আইনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে। মা-বাবা, ভাইবোন কত পবিত্র সম্পর্ক, দেখুন সেখানে স্বার্থ ঢুকে গেছে। ভারত কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করল এখন আবার নাগরিকত্ব সংশোধন বিল করছে। একই কাণ্ড মিয়ানমারও করেছে, আবার তারা গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন আইন নির্ধারণ করছে।
ইসরায়েল নিত্যনতুন আইন করছে আর নতুন নতুন বসতি স্থাপন করছে। সবার উদ্দেশ্য হল সংখ্যা লঘু মুসলিমদের দেশ থেকে বিতাড়ন। এভাবে আইনের সুব্যবহার না করে অপব্যবহার করা শুরু করেছে সবাই। দেশে হেলমেট বাধ্যতামূলক হওয়ায় এক দেড়শ টাকা দামের যেনতেন হেলমেট দিয়ে কাজ সারিয়ে ফেলছে সবাই। অর্থাৎ সবাই আইন মানছে। বাগানের ফুল ছেঁড়া নিষেধ তাই চোর ফুল না ছিঁড়ে গাছগুলো তুলে নিয়ে গেছে। কি চমৎকার আইন মানা, হাহাহা। হেলমেটের অবস্থাও তেমন আরকি এবং সকলের আইন মানাও তেমন। আচ্ছা ঠিক আছে পরিবার তার সদস্যদের সাথে বাটপারী করছে। সমাজ তার বাসিন্দাদের সাথে প্রতারণা করছে, রাষ্ট্র তার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, মানলাম। কিন্তু তাই বলে যে সবাই মিলে আমরা পরিবেশের সাথেও বাটপারী শুরু করলাম, এটি কেমনে মানি? শুনেছি পরিবেশ কোনঋণ নাকি তার নিজের কাছে রাখেনা বরাবর শোধ করে দেয়। এখন পরিবেশকে আমরা যে ঋণী করেছি তা যদি সে একেকে শোধ করতে থাকে আমাদের কি অবস্থা হবে?
ইতোমধ্যে অবশ্য সে ঋণ পরিশোধ করা শুরু করেছে, শীত-গ্রীস্মের তারতম্য দেখলেই তা বুঝা যায়। চট্টগ্রামে কখনো ৪০ ডিগ্রী গরম পড়েনি গত বার তা পড়েছে। গত শীতে তো গরম কাপড় গায়েও দেই নি, এবারও মনে হয় তেমনই হবে। আর ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ঠাটা-বিজলী যে হারে বাড়ছে দেখে মনে ভয় ধরে গেছে। তবে অতি বিস্মিত হলাম আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত পানিশূন্য দেখে। আশ্চর্য গোটা জলপ্রপাত শুকিয়ে গেছে, কোন পানি নাই! জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবই নাকিএর কারণ, বিশেষজ্ঞদের দাবি।
ভাবুন মানুষ কি জঘন্য, বিশাল এক জলপ্রপাত নাই করে দিল! আবার দেখলাম ডিসেম্বর মাসেও মস্কোতে বরফ পড়ছে না! অথচ নভেম্বর মাস থেকেই সেখানে বরফ পড়া শুরু করে। আর আমাদের চোখের দেখা তো নিয়মিত দেখছি, জোয়ারের পানি কি পরিমাণ বাড়ছে। জোয়ার এলেই চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা পানির নীচে তলিয়ে যায়। আমি মানি না কো কোন আইন- ঠিক আছে। আমরা দেশের আইন মানিনা, সামাজিক আইন মানিনা, পারিবারিক আইন মানিনা। আমরা ধর্মীয় আইনও মানিনা, অন্তত প্রাকৃতিক আইনটা চলুন মানি। নইলে যে ফাইন হবে, নিজের জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। কারণ প্রকৃতি কোন ঋণ নিজের কাছে রাখেনাÑ এটাই প্রাকৃতিক আইন।

লেখক : কলামিস্ট