‘আমি বিমান সেনা, স্যালুট দিতে জানি’

38

পূর্বদেশ ক্রীড়া ডেস্ক

এবাদত হোসেন চৌধুরীর উইকেট উদযাপনের রহস্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেকেরই জানা। এবার তা জেনে গেল ক্রিকেট বিশ্বও। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া জয়ের নায়ক মাথা উঁচু করে বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে গর্বের কথা।
কিছুদিন আগেও বোলিংয়ের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিল সম্ভবত এবাদত হোসেন চৌধুরীর উদযাপন। উইকেট নেওয়ার পর খানিকটা মার্চ করে তিনি ঠুকে দেন ‘স্যালুট।’
এমন উদযাপনের কারণ তার আরেকটি পরিচয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যই শুধু নয়, তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীরও সদস্য। ২০১২ সালে যোগ দেন বাহিনীতে। বিমান বাহিনীর হয়ে খেলতেন ভলিবল। তবে ভালোবাসা ছিল ক্রিকেটের প্রতিও। আর ছিল জোরে বল করতে পারার সহজাত সামর্থ্য। ভলিবল খেলোয়াড় এবাদত স্বপ্ন দেখতেন কোনোভাবে ক্রিকেটের ভুবনে বিচরণের। ২০১৪ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেটও খেলে ফেলেন।
আরও বড় পর্যায়ে তাকে উঠে আসার সুযোগটা করে দেয় ২০১৬ সালের পেসার হান্ট কার্যক্রম। সেই আসরের সবচেয়ে গতিময় বোলার হিসেবে পুরস্কার পেয়ে যান। ঘষেমেজে তাকে গড়ে তুলতে হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে নিয়ে আসে বিসিবি। সেখানেই একটি ক্যাম্পে তাকে দেখে মনে ধরে সাবেক পাকিস্তানি পেসার ও এখন কোচ হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠা আকিব জাভেদের। যাওয়ার সময় আকিব সংশ্লিষ্টদের বলে যান, ইবাদতের দিকে বাড়তি নজর রাখতে।
ইবাদতের জীবনের মোড় ততদিনে ঘুরে গেছে। ঘুরে যায় ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে অধ্যায়। বিমান বাহিনীর চাকরি যদিও রয়ে যায়, বাহিনী থেকে সহায়তাও পান যথেষ্ট। তবে ক্রিকেট হয়ে ওঠে তার জীবন।
ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ততটা ছিল না। বিসিবির সিস্টেমে থেকে চেষ্টা করেন নিজেকে তৈরি করার। এরপর নজর কাড়েন ঘরোয়া ক্রিকেট, বিসিবি একাদশ ও বিপিএলে। পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান বিপিএলে। ২০১৯ সালের মার্চে মাথায় ওঠে টেস্ট ক্যাপ।হতাশার অধ্যায়ও শুরু সেখান থেকে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে একদমই সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। বলে ছিল না ধার, বৈচিত্র ও স্কিলের গভীরতা। এই সফরের আগে ১০ টেস্ট খেলে উইকেট ছিল ¯্রফে ১১টি। বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪, দশটির বেশি উইকেট শিকারিদের মধ্যে যা ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
তবু এবাদতের ওপর আস্থা রেখে যায় দল। অবশেষে তিনি দিলেন সেটির প্রতিদান। দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিং কীর্তি গড়ে দলকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।
এই টেস্টে বারবারই দেখা গেছে এবাদতের স্যালুট। বোলিংয়ের পাশাপাশি তার উদযাপনও আলোচনার খোরাক জোগায় নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে। ম্যাচ শেষ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নেওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হলো উদযাপন নিয়ে। হাসিমুখে তিনি তুলে ধরলেন দুটি সত্ত¡ার গর্বের কথা।“আমি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সেনা। আমি জানি কিভাবে স্যালুট করতে হয়। ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসা একটি লম্বা গল্প। আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি এবং বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করছি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকেও।”
এবাদতের উন্নতির পেছনে ওটিস গিবসনের অবদানের কথাও বাংলাদেশ ক্রিকেটে অজানা নয়। বোলিং কোচ দীর্ঘদিন ধরেই নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছেন তাকে নিয়ে। তার সামর্থ্য নিয়ে আশার কথাও শুনিয়েছেন বারবার। প্রবল সমালোচনার মধ্যেও ভরসার হাত রেখে গেছেন কাঁধে। ক্যারিয়ারের স্মরণীয়তম দিনটিতে এবাদতও ভুললেন না কোচের কথা।
“গত ২ বছর ধরে আমি ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করেন। বাংলাদেশের কন্ডিশনে আমরা খুব একটা সহায়তা পাই না। এখনও আমরা শিখছি। দেশের বাইরে কীভাবে বল করতে হয়, শিখছি। কিভাবে রিভার্স করতে হয়, নিউজিল্যান্ডে ভালো লেংথে কীভাবে বল করতে হয়। আমি চেষ্টা করেছি টপ অব দা স্টাম্প হিট করতে। সাফল্য এসেছে তাতেই, একটু ধৈর্য ধরতে হয়েছে।”
নিজের সাফল্যের পাশাপাশি এবাদত উচ্ছ¡সিত দলের ইতিহাস গড়া জয়েও। ২৭ বছর বয়সী পেসার বললেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের অতীত বদলে ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণার রসদ রেখে দিতে চেয়েছিলেন তারা।