আমিরাতে বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে শত শত খেলার মাঠ

12

সাইফুল্লাহ্ চৌধুরী, আমিরাত থেকে

আরবরা ক্রিকেট খেলতে মোটেই আগ্রহী বলে মনে হয় না। তারা ফুটবল, ঘোড়ার দৌড়, উঠের দৌড় বা মোটর রেসিং নিয়ে যেমন ক্রেজি তেমন কোনো তৎপরতাই দেখা যায় না ক্রিকেটে। তবে দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবসায়িক চিন্তায় ঠিকই ক্রিকেটেও প্রচুর বিনিয়োগ করছে। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির হেড কোয়ার্টার অনেকদিন থেকেই দুবাইতে। নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবে সারা বিশ্বের সেরা পছন্দ এখন আমিরাত। শান্তিশৃঙ্খলা আর বিশ্বসেরা স্থাপনার কারণে বিশ্বকাপসহ বড় যে কোনো ক্রিকেট আসর আয়োজনে আরব আমিরাত এখন আইকন। এক কথায় বলা যায়, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতন কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার সমস্ত উপাদান আস্তে আস্তে সেট করছে আরব আমিরাত।
তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায় শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পর দুবাই ও আবুধাবিতে দুটি দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এ দুটি শুধু ক্রিকেট ভেন্যু নয়, অত্যাধুনিক স্পোর্টস সিটি। আবুধাবিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে আইসিসি অনুমোদিত বিশ্বের একমাত্র দশ ওভারের ক্রিকেট সংস্করণ ‘আবুধাবিটি-টেন’ এর ৫ম আসর। অত্যাধুনিক এ ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে ঘিরে শেখ যায়েদ স্পোর্টস সিটি যাতে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলার ১২টি সুন্দর মাঠ। এ মাঠগুলোতে সবুজের সমারোহ ছাড়াও ফ্লাডলাইট ও ফেন্সিং রয়েছে যাতে ২৪ ঘন্টা এগুলো খেলার উপযোগী থাকে। তাই তো, যখনই আমরা এ মাঠে যাই, তখনই দেখা যায় বিভিন্ন বয়সের শত শত ফুটবলার, ক্রিকেটার, বাস্কেটবল খেলোয়াড় অনুশীলন বা ম্যাচে ব্যস্ত।সবকিছুই কিন্তু অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে, সিস্টেম মেনে। এতো গেল সরাসরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্পোর্টস ভেন্যু।
গতকাল আজমানে গিয়ে আরও অবাক হয়ে গেছি। শহরের অনেক বাইরে পাশাপাশি ১০-১২টা মাঠ। প্রতিটি মাঠই শুধু সবুজ নয়, বিশাল বিশাল এ মাঠগুলোর বাউন্ডারিওয়াল এর বাইরে ঘন করে এমন গাছ তোলা হয়েছে, ভিতরে না গেলে মনে হবে জীবন্ত গাছের তৈরি বাউন্ডারিওয়াল। কি দারুণ রুচি! ক্রিকেট-ফুটবল প্রত্যেকটি মাঠেই রয়েছে ফ্লাডলাইট, পানি দেওয়ার ব্যবস্থা, ৪/৫টি করে পিচ, বিশাল সাইজের সাইটস্ক্রিন, বড়-ছোট রোলার, প্যাভিলিয়ন, ড্রেসিংরুম, তারকা হোটেলের মত উঁচুমানের ওয়াশরুম, ক্যান্টিন, স্পোর্টস শপ ইত্যাদি। মাঠের কেয়ার টেকারের কাছে জানলাম, এসব জায়গা সরকার থেকে লিজ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত খেলার মাঠে পরিণত করেছে। এসব মাঠ বিভিন্ন ক্লাব বা সংগঠন তাদেও প্রয়োজন মত ব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে। এতে ক্রীড়ার যেমন উন্নয়ন হচ্ছে তেমনি দেশের জনশক্তির কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর ব্যবসায়িক লাভও হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে জানলাম, আজমান ওভাল নামে একটি মাঠ একটি টি-২০ ম্যাচের জন্য দিনের বেলায় বাংলাদেশি মুদ্রার হিসেবে ৪৫ হাজার টাকা আর রাতে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। প্র্যাক্টিসের জন্য ঘণ্টা হিসেবে চার্জ নেওয়া হয়। তবে লাখ টাকা দিলেও খেলা ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয় না। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, একটা মাঠ করে বা অকেজো বা অসুন্দর মাঠকে ধূলা-বালিহীন সবুজ ও স্বাস্থ্যসম্মত করে শুধু খেলার উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান এবং আয়ের উৎসেও পরিণত করা যায়। আমাদের দেশ নয়, চট্টগ্রামেও এ ধরনের অনেক মাঠ তৈরি হয়েছে যেগুলো ভাড়া দিয়ে ভাল আয় করা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব, মেধাবি ও অভিজ্ঞ সংগঠকদের পরামর্শ গ্রহণ পূর্বক সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে আন্তরিকতা।
আরব আমিরাতের আজমানে যে ম্যাচটি দেখতে গিয়ে এ লেখার অবতারণা সে ম্যাচে চট্টগ্রামের খ্যাতিমান ক্রিকেটার ও সংগঠক আবুল হাসেম রাজার অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয় পেয়েছে বাংলাদেশীদের টিম। গতকাল পাকিস্তানিদের ফ্রেন্ডস ইউনাইটেড ক্রিকেট ক্লাবকে ২৯ রানে পরাজিত করেছে মাস্কাটিয়ার্স। আগে ব্যাটিং করে মাস্কাটিয়ার্স নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে। একটি ছক্কা ও ৮টি চৌকার সাহায্যে রাজা ৫৬ বলে অপরাজিত ৭২ রান করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা কাজী মাত্র ১৮ বলে করেন ৪৪ রান। বল হাতে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে একটি উইকেটও নেন রাজা।