আমানের বক্তব্য আন্দোলন চাঙা করার ‘চমক’?

46

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে। আর কারো কথায় দেশ চলবে না।’- এমন মন্তব্য করে আলোচনায় এসেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহব্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
গতকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মন্তব্যটির বিশেষত্ব খুঁজতে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মানুষ।
তিনি বলেন, প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে; কাঁচপুর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, সারা বাংলাদেশ বন্ধ করে দেবেন। এই বাংলাদেশ চলবে না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে দেশ চলবে না কারো কথায়।
আমান উল্লাহ আমানের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এমন বক্তব্যকে বিএনপিপন্থীরা চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে চমক হিসাবে দেখছেন। অবশ্য সরকার দলীয় নেতারা এই মন্তব্যকে ‘কৌশল’ হিসাবে বিবেচনা করছেন। আন্দোলনমুখী নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এমন কৌশলী বক্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনীতিতে অনেক সময় অনেক বক্তব্য আসে। কর্মীদের চাঙ্গা করার কৌশল হিসাবে এমন বক্তব্য দেয়া হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে তারিখ নির্ধারণ করে যে বক্তব্য সেটাও এমন বক্তব্য। মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতিতে বিএনপি নেই। কর্মীদের উদ্দীপ্ত করার জন্য এমন বক্তব্যগুলো দেয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই বক্তব্যটিকে শুধু নিছক বক্তব্য বলতে নারাজ। সাম্প্রতিক বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচির আলোকে কর্মীদের চাঙ্গা করতে ‘কৌশলগত’ বক্তব্য বলে মনে করছেন কেউ কেউ। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি। তাছাড়া সমমনা ও সরকার বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির কাজও করছে দলটি। ইতিমধ্যে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতাদের কাছে। সে হিসাবে আমান উল্লাহ আমানের বক্তব্যে অগ্রিম আন্দোলনের ইঙ্গিত বহন করে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ রয়েছে। সেখানে থেকে বৃহৎ আন্দোলনের পরিকল্পনাও থাকতে পারে দলটির।
তবে বিএনপির একাধিক নেতার সাথে এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ বিষয়টি পরিস্কার করতে পারেননি। তারা এমন বক্তব্যকে নিছক বক্তব্যই মনে করছেন। তাদের মতে, আপাতত বিভাগীয় সমাবেশ ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি। বিভাগীয় সমাবেশের পরে ধারাবাহিক কর্মসূচি আসার সম্ভাবনা আছে। সময়ের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচিগুলো ঘোষণা করা হবে। তাছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে পুরোপুরি রাজনীতির বাইরে তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দেশের বাইরে। তবে দেশের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে বলে মনে করছেন তারা। তারেক রহমান দেশে এসে হাল ধরবেন বলেও মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের একটি পক্ষ দাবি করছেন, চলমান বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি হবে ঢাকায়। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই দিন ঢাকায় বিশাল সমাবেশ হবে। সমাবেশে মানুষের ঢল নামবে। হয়তো বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছিলেন আমান উল্লাহ আমান। অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশের ব্যাপকতা বোঝাতে তিনি এমনটা বলতে পারেন।