আমাদের অহংকার ও সাহসের আরেক নাম পদ্মাসেতু

17

 

আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বাঙালির বহুদিনের প্রতীক্ষার ফসল আজকের এই পদ্মাসেতু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে গড়া বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা।যিনি শত বাঙালির প্রাণের বন্ধু। পদ্মা সেতু নিছক স্টিলের কোন কাঠামো নয়। পদ্মা সেতু আমাদের আমাদের আবেগের নাম। আমাদের অহংকার ও সাহসের আরেক নাম। অর্থনৈতিক মুক্তি সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিপুল আগ্রহ নিয়ে বাংলার সংগ্রামী মানুষ দুচোখ ভরে অপ্রত্যাশিত সেই স্বপ্নের সেতুর সৌন্দর্য অবলোকন করছে। এ সেতু জাতির আবেগকে বিপুল হারে সাড়া জাগিয়েছে।
জসিম উদ্দিন নামে এক মধ্যবিত্ত ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে তার মুমূর্ষ সন্তানকে ১৬ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে শিশুটির শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য স্বপ্নের সেতুটি দেখাতে নিয়ে যায়। এই সেতুর নির্মাণ কাজ আরো আগেই বাস্তবায়ন হত যদি না বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী প্রকট আকার ধারণ না করতো। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু তৈরিতে শুরু থেকেই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। চমৎকার এই প্রকল্পটি আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির এক অনন্য প্রতীকে পরিণত হয়েছে।সারা বিশ্বে তাক লাগানোর মত অনন্য ও অসাধারণ এই সেতু। একটি স্বাধীন দেশ তার জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের অর্থে এমন একটি মেগা প্রকল্পের চ্যালেঞ্জিং সম্পন্ন করার যে সাহস দেখিয়েছেন তা শুধুমাত্র বঙ্গকন্যা জনো নেত্রী শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তির অপূর্ব দৃষ্টান্ত। সকল প্রতিক‚লতাকে ঠান্ডা মাথায় নিয়ে সাফল্যের দ্বার প্রান্তে নিজেকে পৌঁছাতে জাতির পিতা শিখিয়েছেন। আর সেই মনোবলে থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখে দুর্বার গতিতে স্বদেশ গড়ার এক অসামান্য লড়াইয়ে নেমেছেন আজকের বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। একটা কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে, পদ্মা সেতু সাহসী নেতৃত্বের এক কালজয়ী পরম্পরার ফসল। আরো আনন্দের সাথে বলতে হয় এই সেতুর নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির কোন সুযোগ ছিল না।এ সেতু নির্মাণে চ্যালেঞ্জ ও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সম্পন্ন হয়েছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এ মেগা প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ থেকে আমাদের প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী শিখেছেন অনেক কিছু। অদূর ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য অসম্ভব কিছুই নয়। আবেগ ও উচ্ছ¡াস বাদে ও পদ্মা সেতুর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ২১ টি জেলার অর্থনীতি ও সমাজে আসবে অকল্পনীয় পরিবর্তন। এ সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেল দুই পথেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ অল্প সময়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। দিনের পর দিন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হবে না পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে।
দক্ষিণ বাংলার গ্রামেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে। কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে জনবহুল যে রাজধানী ঢাকা তার সঙ্গে অনায়াসে সংযুক্ত হতে পারবে। নিঃসন্দেহে সেতুটি চালু হওয়ার পর শিল্প কারখানা স্থাপনে আরো বেশি করে উৎসাহী হবে দেশ-বিদেশের উদ্যোক্তারা। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে বঙ্গকন্যা বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য অর্থনৈতিক মুক্তির মহাসড়কের আরেকটি মাইলফলক স্থাপন করতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার পুরো জাতির মননে আমরাও পারি ধারণাটি গেঁথে রাখতে। হতাশা নয়, দৃঢ় প্রত্যয় ও সাহসিকতায় অধিকারের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে দ্বিগুণ বেগে। স্বপ্নের এই সেতুটি শুধু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেই নয়, পুরো জাতির মনে বুনে দিতে যাচ্ছে আরো বড় হওয়ার আশার স্বপন।