আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে চাল উৎপাদন

63

চট্টগ্রামে সদ্য সমাপ্ত আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে উৎপাদন। মৌসুমে সাড়ে চার লাখ টন চাল লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ টনের কিছু বেশি। মৌসুমে ৫৩ হাজার টনের মতো বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি বিভাগ বলছে, সার ও বীজের পাশাপাশি সঠিক সময়ে বৃষ্টির পানি পাওয়ায় বিগত আমন মৌসুমে ফলন বেড়েছে আশার চেয়েও বেশি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ধানকে চালের হিসেবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। বিগত আমন মৌসুমে চট্টগ্রামে ৪ লাখ ৫১ হাজার ১৬০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা কৃষি বিভাগ। তবে আমন মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫২ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিগত আমন মৌসুমে আবাদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম। মৌসুমের শুরুতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৯ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে ২ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে উফশী ও ২৯ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয়েছে। সব মিলিয়ে মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ১১১ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়।
কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বিগত আমন মৌসুমে জেলার ফটিকছড়িতে ২১ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়।
যা হতে ৬৩ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। জেলার ১৪ উপজেলার মধ্যে ফটিকছড়িতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে মিরসরাইয়ে। মিরসরাই উপজেলায় ২০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৫৬ হাজার ২৫ মেট্রিক
টন চালের উৎপাদন হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। চট্টগ্রামে ধানের গোলা খ্যাত গুমাই বিলের অবস্থান রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এ উপজেলাতে ১৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে ৪৭ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।
এছাড়া হাটহাজারিতে ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে ২৭ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন, রাউজানে ১১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে ৩২ হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন, সীতাকুন্ডে ৫ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১২৫ মেট্রিক টন, স›দ্বীপে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৪২ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
অন্যদিকে পটিয়া উপজেলায় ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ৪১ হাজার ১৮৭ মেট্রিক টন, বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টন, আনোয়ারায় ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ৪১৭ মেট্রিক টন, চন্দনাইশে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২০ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন, লোহাগাড়ায় ১০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৩২ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টন, সাতকানিয়ায় ১২ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে ৩৮ হাজার ৮৬৩ মেট্রিক টন ও বাঁশখালীতে ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদন হয়েছে ৪৩ হাজার ১শ মেট্রিক টন।
তাছাড়া মহানগরীর পাঁচলাইশে ১ হাজার ৯৫ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৪৮০ হেক্টর এবং পতেঙ্গায় ৮১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। মহানগরীর এসব জমিতে ১০ হাজার ৩৮২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল হক পূর্বদেশকে জানান, ‘সদ্য শেষ হওয়া আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। আবাদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছিল।’
জেলা এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষিতে ঘূর্ণিঝড় কিংবা খড়া অভিশাপ হিসেবে আসে। কিন্তু বিগত আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড় তিতলি ধানের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছিল। কারণ ওই সময়ে ধানের থোর (ফুল) আসার সময় সঠিকভাবে পানি পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় তিতলির সময়ে বৃষ্টির পানি সবচেয়ে বেশি উপকার করে আমন ধানের। ওই সময়ে পানি না পেলে ধানের ছিটা বেড়ে যেত, উৎপাদন কমে যেত। কিন্তু অক্টোবরের ওই সময়কার বৃষ্টির পানি ধানের জন্য যথেষ্ট কাজে লেগেছে, উৎপাদনও বেড়েছে। যে কারণে আমন মৌসুমে আমরা ৫ লাখ টনের বেশি চাল উৎপাদনে সমর্থ হই।’