আমদানি করা পেঁয়াজের ৬০ শতাংশই নষ্ট

32

ফারুক আবদুল্লাহ

মিয়ানমান থেকে আমদানি করে আনা পেঁয়াজের ৬০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব পেঁয়াজ এনে লোকসানে মাথায় হাত পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের। একই সাথে ভারত ও মিয়ানমার থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ এনে কম দামে বিক্রি দামে বিক্রি করায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তারা। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন। পেঁয়াজে লোকসানের প্রভাবে সামনে আবারও দাম বাড়তে পারে বলে শঙ্কা তাদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি করে সবাই ক্ষতির সম্মুখিন। কারণ মিয়ানমারের বেশির ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট। আবহাওয়া খারাপ ও পণ্যের গুণগত মান কম হওয়ায় এসব পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে বেশি। আবার ভারতে পেঁয়াজ যে দামে আনা হয়েছে, সে দামে বিক্রি না হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। তাছাড়া পেঁয়াজ যতই ভালো হোক না কেন বেশিরভাগ সময় বস্তা প্রতি ২ থেকে ৩ কেজি নষ্ট থাকে। গরমের কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আহসান খালেদ জানান, একটি গাড়িতে ৩৮০ বস্তা পেঁয়াজ থাকে। আর এক বস্তায় ৩৮ থেকে ৩৯ কেজি পেঁয়াজ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে। অনেক সময় পুরো গাড়ি ফেরত দিতে হচ্ছে। তাই মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি করে সবাই ক্ষতির সম্মুখিন। একইভাবে ভারতের পেঁয়াজ বেশি দামে কেনে কম দামে বিক্রি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বুধবার ভারতের নাসিক পেঁয়াজ কেনা দর ছিল ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। কিন্তু তা পাইকারিতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেনা দর ৪৮ টাকা হলেও পচে যাওয়ায় তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তবে মিয়ানমারের ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায়। এছাড়া ইন্দুরী পেঁয়াজ ৪০ টাকার উপরে কেনা, তা বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ৩৭/৩৮ টাকা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ যতই ভালো হোক না কেন বস্তা প্রতি ২ থেকে ৩ কেজি নষ্ট থাকে। গরমের কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়।
চাক্তাইয়ের পাইকারিতে পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল বশর বলেন, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ট্রলারে আমদানি হয়। সেখান থেকে আনা পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।
জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম দিকে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭০-৮০ টাকা কেজি। ভারতে বৃষ্টি ও পূজার কারণে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তাই সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হবে না বলে জানায়। এতদিন ৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক দিতে হতো। শুল্ক কমানোর পর বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের সত্বাধিকারী আলাউদ্দিন আলো জানান, মিয়ানমারের আমদানি করা পেঁয়াজের প্রসেসিং নাই। এসব পেঁয়াজ আসার পর এক জায়গায় ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীরা এনে থাকেন। ট্রাক প্রতি ৮ থেকে ১০ বস্তা মাল নষ্ট থাকে। এতে পেঁয়াজ এনে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানায়, গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ হাজার ১০০ মেট্রিক টন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে মিয়ানমার থেকে সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন, আগস্ট মাসে ৭৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। এছাড়া সর্বশেষ আরও মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ২৮ হাজার বস্তায় ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসার কথা জানান ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের তথ্য মতে, এই বন্দর দিয়ে গত সোমবার যেখানে ১৭টি ট্রাকে ৪৬৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। মঙ্গলবার আমদানি হয়েছে ২৭টি ট্রাকে ৭৫৫ টন পেঁয়াজ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য দেশে মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। যা আগের বছর তথা ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ উৎপাদন বেড়েছে ছয় লাখ ৩৯ হাজার ২০০ হাজার টন, যা শতকরা হারে ২৪.৯৬ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছর দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টন। আগের অর্থবছরের চেয়ে ওই বছর উৎপাদন বেড়েছিল দুই লাখ ৩০ হাজার ৩০০ টন বা ৯.৮৮ শতাংশ। যদিও প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ উৎপাদন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় নষ্ট হয়।