আমদানি কমিয়ে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাই

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, ‘আমদানি নির্ভরশীলতা আমরা কমাতে চাই। আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি, আমদানির জন্য করহার হ্রাস করা এবং বিভিন্ন ধরনের সুয়োগ সৃষ্টি করে দেওয়া, সেটি কিন্তু আমাদের টার্গেট না। আমরা দেশিয় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাই। সে জন্য অনেক ক্ষেত্রে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করছি। যেই প্রোডাক্টটি দেশে উৎপন্ন হচ্ছে সেটি আমদানিতে নিরুৎসাহিত করবো।’
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর হোটেল আগ্রাবাদের কর্ণফুলী হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কখনো কখনো আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি লোকাল ইন্ডাস্ট্রিকে সাপোর্ট করা জন্য। আবার কখনো কখনো সেই প্রতিবন্ধকতা তুলে দিই, যাতে লোকাল ইন্ডাস্ট্রি খাতে আরো গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারে। দেশের চাহিদার পাশাপাশি বিদেশের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে পণ্য রপ্তানি করতে পারে। তাছাড়া ভোগ্যপণ্য আমদানি আমরা উৎসাহিত করবো না।’
প্রাক-বাজেট আলোচনায় সিএমসিসিআই’র পক্ষে লিখিত বক্তব্যে সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উন্নয়নের মহোৎসব। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, প্রযুক্তি, খেলাধুলা, পর্যটন, সমুদ্র অর্থনীতি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ইত্যাদি সর্ব ক্ষেত্রেই সাফল্যের সঙ্গে উন্নয়ন করে চলেছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ ছাড়াও আরও যে সকল উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে তা কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। এ ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সহ বিদেশেও দেশের ভাবমুর্তি আরও উচ্চতর শিখরে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলেও বর্তমান সরকারের দৃঢ়, সাহসী ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা থাকা সত্তে¡ও করোনা মহামারী পরবর্তী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ জনগণের উপর। এমন পরিস্থিতির মাঝে কিছুদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। এমন অবস্থায় আমদানি পণ্যের শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কোন ব্যবসায়ী যাতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পণ্যমূল্যের অযৌক্তিক দাম বাড়িয়ে দেশের জনগণকে ভোগান্তিতে না ফেলে সে আহবান জানাচ্ছি।’
এসময় খলিলুর রহমান আমদানি করা উপকরণের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর শূন্য হার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই শতাংশ হারে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। এছাড়া ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো খাতের করহার আট শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশ নিয়ে আসা, বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের খাত গার্মেন্টসের আয়ের উপর উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ত্রিশ শতাংশ করার দাবি জানান। এছাড়া প্রাইভেট আইসিডির ক্ষেত্রে ভারি সরঞ্জাম বা মেটেরিয়াল হ্যান্ডেলিং ডিভাইস আমদানির ওপর করের হার কমানোর দাবি জানান।
সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক (শুল্ক নীতি), ড. সামস উদ্দিন আহমেদ (আয়কর নীতি), জাকিয়া সুলতানা (মূসক নীতি), সিএমসিসিআই’র সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরীসহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বাজেটের উপর বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় চট্টগ্রাম কাস্টমস, কাস্টমস বন্ড, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের উচ্চপর্দস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।