আবু আহম্মেদকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

56

ঢাকা প্রতিনিধি

প্রসাধনীর ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগে অভিযুক্ত চট্টগ্রামের আবু আহম্মেদ ওরফে আবুর (৪৯) আগাম জামিন মঞ্জুর করেনি হাইকোর্ট। তাকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আদালতের অনুমতি ছাড়া তার বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহরিয়ার কবির। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড অর্গানাইজডের উপ-পুলিশ পরিদর্শক হারুন উর রশিদ বাদী হয়ে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোতোয়ালি থানায় আবুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তার ও তার কর্মচারীসহ ২০ সহযোগীর বিরুদ্ধে ৪০৯ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, কসমেটিকস ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত চট্টগ্রাম ফটিকছড়ির আবু আহম্মেদ ওরফে আবু (৪৯)। গত এক দশকে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে তিনি নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সম্প্রতি তার নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে ৪০৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড। তার বিপুল পরিমাণ জমি ও প্রাসাদতুল্য বাড়ির খোঁজ মিলেছে। এরই জেরে আবু আহম্মেদ ও তার ১৯ সহযোগীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছে সিআইডি। আবু আহম্মেদ হচ্ছেন ফটিকছড়ি উপজেলার ফতেপুর গ্রামের ফয়েজ আহমেদ ওরফে বলি সওদাগরের ছেলে।
সূত্র জানায়, দেশের শীর্ষ স্বর্ণ চোরাকারবারিদের মধ্যে আবু আহম্মেদ অন্যতম। প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান করে আবু এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। তার সম্পত্তির মধ্যে ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ও জাহানপুর এলাকায় ২৪টি দলিলমূলে জমি ক্রয় করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ১৬ কাঠা জমি ছাড়াও চান্দগাঁওয়ে ছয়তলা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাড়ি রয়েছে। এছাড়া রাউজানের ফতেহনগর এলাকায় পল্লী কানন ও পল্লী শোভা কনভেনশন হল, ফটিকছড়ির জাফরনগর এলাকায় দৃষ্টিনন্দন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনতলা বাড়ি জাহানারা ম্যানশন, রিয়াজুদ্দিন বাজারে দুটি, স্যানমার ওশান সিটিতে একটি দোকান ছাড়াও দুবাইয়ে দুটি দোকানের খোঁজ মিলেছে। ২০০৫ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আবুর নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক হিসাবে ৪০৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
মামলায় আবু ছাড়াও ইকবাল আহমেদ ওরফে নিজাম, আবু রাশেদ, এস এম আসিফুর রহমান, ওবায়দুল আকবর, রফিক, মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন বাবলু, ইমরানুল হক কপিল চৌধুরী, এমতিয়াজ হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফরিদুল আলম, মোহাম্মদ এরশাদুল আলম, মো. হাসান, রুবেল চক্রবর্তী, মিনহাজ উদ্দিন, সাগর মহাজন, দিনবন্ধু সরকার, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাবেক কমিশনার শাহজাহান ও টিটু ধরকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। এদিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা গডফাদার আবু সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।