আবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সীতাকুন্ডে

87

সপ্তাহের শেষে শুক্রবার ছুটির দিনে চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম ভারী বর্ষণ নিজেকে মাঝারি মাত্রায় নামিয়ে এনে একদিনের বিরতিই নিয়েছিল। চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে বিরতি থেকে ফিরতেই ফের নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেছে বর্ষার বারিধারা। তাও সারাদেশের মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম সদরসহ আশপাশের চারটি এলাকায়। তাতেই মাঝখানের একদিন বাদে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেশের সর্বোচ্চ দুইশ ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নিজের দখলে নিল শহরতলীর উপকূলবর্তী এলাকা সীতাকুÐ। আষাঢ়ের বিদায় পর্যন্ত মানে আরও দুই-তিনদিন মৌসুমের প্রথম দফার ভারী বর্ষণের এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় সারাদেশের মধ্যে ভারী বর্ষণ হয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সদর, সীতাকুন্ড, সন্দ্বীপ ও পাবর্ত্য জেলা রাঙামাটিতে। এই চার এলাকাতেই রেকর্ডকৃত সার্বিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয়শ’ ৫৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে সীতাকুন্ড বাদে চট্টগ্রাম সদরে একশ’ ১৮ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে একশ’ ৩৪ আর রাঙামাটিতে একশ’ ৮৭ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। এর বাইরে সারাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ভারীর ঘর ছুঁয়েছে মাত্র। পরিমাণে যা ৮৯ মিলিমিটার। সপ্তাহের শেষদিন গত বৃহস্পতিবারও সীতাকুন্ডে দেশের সর্বোচ্চ দুইশ’ ১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ আজ রবিবারও ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা জানিয়ে পূর্বদেশকে বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে রবিবার দিবাগত রাত দশটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (ন্যূনতম ৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ৭ জুলাই থেকেই দেশে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশদ্বার সমুদ্রতীরবর্তী কক্সবাজার অঞ্চলের টেকনাফ ধরেই চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম টানা ভারী বর্ষণ শুরু হয়। অবশ্য তার আগে জুলাইয়ের প্রথম দুদিন সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত হলেও লঘুচাপের প্রভাব পুরোপুরি কেটে না যাওয়ায় তা কেবলমাত্র ওই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরের সপ্তাহে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে মৌসুমি বায়ু এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতেই কার্যত পুরো চট্টগ্রামবিভাগই ভারী বর্ষণের কবলে পড়ে। যা একটানা গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ওই সময়ের মধ্যে বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় সার্বিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে হাজার মিলিমিটারের ঘর অতিক্রম করেছে। একইভাবে প্রতিদিনই চট্টগ্রাম বিভাগের অন্ততপক্ষে দুটি এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দুশ’ মিলিমিটার ছাড়িয়ে গেছে। একশ’ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভাগের পাঁচ থেকে ছয়টি এলাকায়। এর মধ্যে গত ৯ জুলাই মৌসুমের এযাবত সর্বোচ্চ দুইশ’ ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় কুতুবদিয়ায়। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকাকালে প্রতিদিন দেশের বাকি সব বিভাগের রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তুলনায় চট্টগ্রাম বিভাগের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দ্বিগুণ ছিল। গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষদিনেও বিভাগজুড়ে ভারী বর্ষণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার পর গত শুক্রবার বর্ষণধারা ভারী থেকে মাঝারি মাত্রায় নেমে আসে। প্রসঙ্গত, বাংলা বর্ষপঞ্জিকার হিসাবে আষাঢ় পেরিয়ে আগামী ১৬ জুলাই যাত্রা শুরু হবে শ্রাবণ মাসের।
এর আগে গত পয়লা জুলাই আবহাওয়া অধিদপ্তরে বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে জানানো হয়েছিল, চলতি বছর বিদায়ী জুন মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩৭ দশমিক সাত শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হলেও জুলাই মাসে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। জুনে স্বাভাবিক গড় হিসেবে চারশ’ ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও অধিদপ্তরে রেকর্ড করা হয়েছে দুইশ’ ৭৩ দশমিক ৯ মিলিমিটার। তবে, স্বাভাবিক ১৮ দিনের স্থলে দেশজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাসের ৩০ দিনই। স্বাভাবিক গড় হিসেবে জুলাই মাসে পাঁচশ’ ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও এবার তা চারশ’ ৯০ থেকে পাঁচশ’ ৭০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তিকাল স্বাভাবিক হিসেবে ২২ দিন হলেও এবার তা হতে পারে ২০ থেকে ২৫ দিন। এছাড়া, জুন মাসে বৃষ্টিপাত, লঘুচাপ, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে আরও বলা হয়, জুলাইয়ের মধ্য ও শেষভাগে মৌসুমি বায়ু দেশের ওপর প্রবলভাবে সক্রিয় হলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়ে যেতে পারে। একই কারণে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য আসাম এবং মেঘালয়েও যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ে, তাতে পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হতে পারে। এজন্যই মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মধ্যমেয়াদি বন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।