আবার দেখা যদি হল সখা প্রাণের মাঝে আয়…

37

সাইফুল্লাহ চৌধুরী

চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে পুরো এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকা রূপ নিয়েছে উৎসব ও খেলোয়াড়দের মিলনমেলায়। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ব্যাপক উৎসব উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির এ নির্বাচন। কর্ম ব্যস্ততায় সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খেলোয়াড়রা এসেছেন ভোট দিতে।
তবে ভোট দেওয়ার চেয়ে তারা বেশি উৎফুল্ল ছিলেন পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে। দূর থেকে হাত তুলে, চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রথম জিজ্ঞাসা, কেমন আছিস দোস্ত, কতদিন পর দেখা। ভোট দিতে আসিনি দোস্ত, এসেছি তোদের সবার সাথে দেখা হবে সেজন্য।
তাদের কাছে এটা কোন ভোট নয়, ফুটবলারদের মিলন মেলা। ২০১৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৬১২ জন, শতকরা হিসেবে যা ৮০ ভগেরও বেশি।
এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সকাল থেকে তদারকি করে গেছেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ সংশ্লিষ্টরা। মাইকে সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে সবাইকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
চন্দ্রঘোনা থেকে ভোট দিতে এসেছেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার বিপ্লব মার্মা। তার মতে, ভোট দেওয়ার চাইতেও পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, তাই তিনি এসেছেন। তিনি বলেন, সেই কবে খেলা ছেড়েছি, কিন্তু পুরনো সতীর্থদের কতদিন দেখি না। তাদের দেখতে মনটা আনচান করলেও সময় ও ব্যস্ততায় দেখা করা সম্ভব হয় না। তবে চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির নির্বাচন সবাইকে আবার এক জায়গায় একত্র হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। মূলত সেই জন্যই আসা।
হাটহাজারী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাফর নিজ উদ্যোগে বাসভাড়া করে খেলোয়াড়দের নিয়ে এসেছেন ভোট কেন্দ্রে। নির্বাচন ব্যবস্থা দেখে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে কেউ ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে আসবেই।
রাজধানী ঢাকা থেকে ভোট দিতে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। সারাদেশের ক্রিকেট প্রেমিরা তাকে আপাদমস্তক একজন ক্রিকেটার হিসেবে জানলেও তিনি যে একসময় তুখোড় ফুটবলার ছিলেন, সেটা অনেকেরই অজানা। সাবেক এই জাতীয় দলের ক্রিকেটার এক সময় ফুটবল খেলতেন তাদের পারিবারিক ক্লাব আবেদীন ক্লাব এবং আগ্রাবাদ নওজোয়ানের হয়ে।
ভোট দিতে এসে প্রতিক্রিয়া ও নির্বাচিত কমিটির কাছে প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভোট দিতে এসেছি মূলত ছেলেবেলার বন্ধু নিজামের ডাকে। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে যেভাবে সবাই ফোনে আসার অনুরোধ জানাচ্ছেন সেটাও একটা বিষয়। এছাড়া নিজের এলাকায় ভোট। এই উৎসবে সবাইকে দেখতে পাবো সেটাতে শামিল হতে আসা। নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা- সিজেকেএস’র সাথে মিলেমিশে চট্টগ্রামের ফুটবলের উন্নয়নে কাছ করে যাবে।
ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক আকরাম খানও। দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়েছেন কল্লোল সংঘের ফুটবলার ইরফান ২০১৬ সালে, তিনিও ক্র্যাচে ভর দিয়ে এসে ভোট দিয়ে গেছেন।
আরেকটু সামনে অর্থাৎ জিমনেসিয়ামের কাছাকাছি যেতেই দেখা যায় সিজেকেএস’র অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীমকে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপ করতে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দারুণ এক নির্বাচন উপহার দিয়েছেন হাফিজ ভাই (প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সিজেকেএস সহ সভাপতি হাফিজুর রহমান)। হার-জিত বড় বিষয় নয়, নির্বাচনে সবাই জিতে না, একজন জিতবে অন্যজন হারবে। তবে সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার মানসিকতা থাকলে সেটা হাফিজ ভাইকে দেখে শিক্ষা নেয়া উচিত। উনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়।
তবে অবাক করার মতো বিষয় হলো- সেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল বছর ছ’য়ে পা দেওয়া ছোট্ট অখিয়ার দিকে। বাবার জন্য ভোট চাইতে এসেছে সে। ভোট কেন্দ্রের দিকে যে ঢুকছেন, তাকে সালাম বিনিময় করে একটা প্রচারপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছেন, আঙ্কেল, আমার বাবা সাইদুল আলম বুলবুল, তাকে একটা ভোট দেবেন প্লিজ।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় কোন নির্বাচন না হওয়ায় চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির অন্তঃকোন্দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে মো. হাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তিনি সবাইকে নিয়ে বসে একটি সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের বরেণ্য ফুটবলার এবং সংগঠকদের সমন্বয়ে ১১ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। তারা চট্টগ্রাম ফুটবল খেলোয়াড় সমিতির সাধারণ সভা করেন, নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেন এবং এর আলোকেই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করেন। এ লক্ষ্যে ফুটবলারদের নতুন করে সদস্য করে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের ৪/৫ মাস পর গতকাল বহুল আলোচিত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল।