আবারও ভূমিধসে মৃত্যু পাহাড়কাটা ও বৃক্ষনিধন রুখতে হবে

11

শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টিতে গত তিনদিনে পাহাড় ও ভূমিধসে কক্সবাজারের একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পসহ টেকনাফ ও পার্বত্য এলাকায় ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারা গেছেন ৬ জন। আর টেকনাফের হ্নিলা এলাকায় মারা গেছেন ৬ জন। বাকি আটজন অন্যন্য এলাকায়। এসব এলাকায় ধসে পড়েছে অর্ধশতাধিক বাড়িও। দুই দিনের টানা ভারি বর্ষণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর বস্তি এখন ঝুঁকির মুখে। শুধু বালুখালী শিবিরেই শতাধিক বস্তি টানা বর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনার পর পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত আশ্রিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ধসের প্রধান কারণ পাহাড় কাটা ও বন উজাড় করা। দ্বিতীয় কারণ, ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের নিচে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে ভাড়া দেওয়া। সাধারণত নি¤œ আয়ের হতদরিদ্র মানুষ কম খরচে থাকার জন্য বস্তির মতো এই ঘরগুলোতে আশ্রয় নেয়। তৃতীয় কারণ, পাহাড়গুলোতে থাকা গাছপালা কেটে পাহাড়টাকে একেবারে উজাড় করে দেওয়া। এর ফলে কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে উপরিভাগের মাটি নরম হয়ে যায় এবং একসময় তা ধসে পড়ে। আবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে কিছু দুর্বৃত্ত পাহাড়ের মাটিও বিক্রি করে। এতে পাহাড়গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এর বাইরে সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন, অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণের মত কাজেও পাহাড় কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। বৃষ্টিপাতের সময় এসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, পাহাড়ধস ঘটে। এতে হতাহত হয় অসংখ্য মানুষ। তাই পাহাড়ধসে মৃত্যু রোধ করতে হলে পাহাড় কাটা বন্ধের পাশাপাশি ন্যাড়া পাহাড়গুলোকে সবুজ আচ্ছাদনে ছেয়ে দিতে হবে। পাহাড়ের ঢালুতে ঘরবাড়ি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। পাহাড় ঘিরে কংক্রিটের দেয়াল ও প্রশস্ত নালা নির্মাণ করতে হবে।
সন্দেহ নেই যে, যতদিন পাহাড় কাটা ও বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা যাবে না, পাহাড়কে সুরক্ষা দেয়া যাবে না, ততদিন মৃত্যুর পরওয়ানা নিয়েই বসবাস করতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষগুলোকে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, পাহাড়ে যাদের বসবাস, বর্ষা তাদের জন্য আতঙ্কের নাম। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকে। ভারি বর্ষণের কারণে প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। আবার পাহাড়ে বসবাসের রীতি-নীতি মানা হয় না। প্রশাসনের নজরদারি ও বিধিনিষেধের মধ্যেও একটি দখলদার স্বার্থান্বেষী মহল যাচ্ছেতাই পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করে আর বৃষ্টি হলেই ওইসব এলাকা ধসের মুখে পড়ে। দায়িত্ব নিতে হয় প্রশাসন বা সরকারকে। পাহাড়ধসের এই চিত্র প্রায় প্রতিবছরেরই। বর্ষায় একনাগাড়ে কয়েক দিন ভারি বর্ষণ হলেই পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের জুন মাসে পাহাড়ধসে মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। এরপর এমন শোকাবহ ঘটনা রোধে বিস্তর পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে খুব কমই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বরাবর বলেছেন, পাহাড়ধসের অন্যতম কারণ পাহাড় কাটা।
ভূ-প্রকৃতির নিয়ম না মানলে তার খেসারত দিতেই হয়। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কেটে অনেক পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পাহাড়ের চূড়া, মধ্যবর্তী অংশ ও পাদদেশে ঝুঁঁকি নিয়ে বাস করছে হতদরিদ্র মানুষ। পাহাড়ে বসতি নির্মাণ চিরতরে বন্ধ করা না গেলে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমরা এমন করুণ মৃত্যু আর দেখতে চাই না। তাই এখনই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ নিরাপদ করতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলায় বনাঞ্চল সৃজনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।