আবারও বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে

47

পানির দাম বৃদ্ধির কয়েকদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। গতকাল ১মার্চ থেকে এ বর্ধিত দামে বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিদ্যুতের এ দাম বৃদ্ধির পরিমাণ ইউনিটপ্রতি ৩৬ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ । চীনে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে যখন দেশীয় অর্থনীতির চাকা প্রায় অচল হওয়ার পথে তখন বিদ্যুৎ ও পানির দাম একসাথে বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ই পরিণত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এতে জনদুর্ভোগ বাড়বে। কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের উপর তার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে সময থাকতে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা জরুরি।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সাথে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত প্রতি হাজার লিটার আবাসিক পানির দাম ১১ টাকা ৫৭ পয়সার স্থলে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিকে প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সার স্থলে করা হয়েছে ৪০ টাকা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি হাজার লিটার আবাসিক পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সার স্থলে ১২ টাকা ৪০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক প্রতি হাজার লিটার পানির দাম ২৭ টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কেবল খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি; একই সঙ্গে পাইকারি ও সঞ্চালন ক্ষেত্রেও এর দাম বাড়িয়েছে। পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট গড়ে ৪০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন মূল্যহার বা হুইলিং চার্জ প্রতি ইউনিটে শূন্য দশমিক ২৭৮৭ টাকা থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৯৩৪ টাকা করা হয়েছে। নতুন করে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক- স্বভাবতই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এমন এক সময় বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হল, যখন করোনাভাইরাসের কারণে দেশের পুরো অর্থনীতি প্রায় স্থবির। চীন থেকে কাঁচামাল না আসায় বেশকিছু শিল্পোদ্যোক্তা হাতগুটিয়ে আছেন। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বিপাকে পড়বে নি¤œ ও সীমিত আয়ের মানুষ। তবে শুধু আবাসিক খাতেই নয়, শিল্প খাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে দ্রব্যমূল্যও। এর মাশুলও দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদেরই। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের আকার স্ফীত থেকে স্ফীততর হচ্ছে।
এর ফলে নির্দিষ্ট আয় ও পেশার মানুষের কষ্ট ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় আবারও বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় তথা দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিযোগ রয়েছে, কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্তে¡ও বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
স্বল্পতম ব্যয়ে উৎপাদন কৌশল গ্রহণ না করায় ভোক্তারা বছরে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বস্তুত সরকার কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল গ্রহণ না করে বেশি দামে উৎপাদন করে কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে, যা অন্যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এতে নিরুৎসাহিত হবে বেসরকারি খাত। সেদিক থেকে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগবিরোধী সিদ্ধান্তও বটে। এ প্রেক্ষাপটে সব দিক পর্যালোচনা করে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করি আমরা।