আবারও বাড়ছে চালের দাম বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে

7

চাল নিয়ে চালবাজি থামছেই না। নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোন তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। বাজারে প্রচলিত কথা সিন্ডিকেট তৎপরতা চালের বাজারকে অস্থির করে তুলছে। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে অসংখ্য প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয়ও লেখা হয়েছে। তাতে সিন্ডিকেটও ভাঙেনি বাজার দরও কমেনি। প্রকৃতপক্ষে লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বাড়ার রহস্য উদঘাটন করতে না পারলে ভোক্তা সাধারণের দুর্ভোগ কমবে না। কিছুদিন আগে সরকার হঠাৎ জ্বালানী তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে সকল ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের বাজার দর বেড়ে যায়। চালের দামও এ সুযোগে আরেক দফা বাড়ানো হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে জ্বালানী তেলের দাম এবং পরিবহন ভাড়া কিছুটা কমলেও চালের দামের গতি ঊর্ধ্বমুখিই রয়ে গেছে। আরো লক্ষ করার বিষয় , চালের দাম কমাতে সরকারের নেয়া কোন উদ্যোগই সফল হচ্ছে না। সবকিছু ভেস্তে যাচ্ছে। স্বল্পমূল্যে ওএমএস চালু এবং আমদানি শুল্ক কমানোর পরও মিলারদের কারসাজিতে ফের চালের দাম বাড়ছে। ভারত আতপ চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করায় মিলাররা এটাকে অজুহাত হিসাবে নিয়েছেন। তারা একদিনে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম আরও বাড়বে। জানা যায়, ভারত শুধু আতপ চাল রপ্তানিতে শুল্কারোপ করেছে; নন-বাসমতি চাল (সিদ্ধ চাল) রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কারোপ করেনি। দুই মাস আগে মিলারদের কারণেই অস্থির হয়ে ওঠে চালের বাজার। তখন বাজার স্বাভাবিক রাখতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। আমদানি শুরুর পর ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদারের সঙ্গে দুদফায় আমদানি শুল্ক ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পমূল্যে ওএমএস শুরু হয়। এতে চালের বাজারের অস্থিরতা দূর হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করতে সুযোগ খোঁজেন। অজুহাত পেলেই তারা তা কাজে লাগিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন। কাজেই ব্যবসায়ীরা যাতে ভোক্তার পকেট কাটতে না পারেন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। চাল এদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। মানুষ তার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যয় করে খাদ্য খাতে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ চাল কিনতেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। কাজেই চালের দামের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনমান। এ অবস্থায় চাল নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি চলতে দেওয়া উচিত নয়। কর্তৃপক্ষ খুচরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিলেও সিন্ডিকেটের হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের। কেবল চাল নয়, সব ভোগ্য ও নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে; কিছুদিন আগে ডিমের দাম একটু কমলেও আবারও তা ঊর্ধ্বমুখী। শিশুখাদ্যের দামও আকাশছোঁয়া। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার দীর্ঘশ্বাস বেড়েই চলেছে; আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নি¤œ মধ্য আয়ের ও অসহায় গরিব মানুষ। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো তৎপরতা শুধু ছবি তুলে সংবাদপত্রে নিউজ প্রকাশ পর্যন্ত সীমিত থাকে। আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজারে যারা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, দ্রæত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার এ বিষয়ে আরো কঠোর হবে-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।