আবারও পাহাড় কাটবে সিডিএ

133

৩২০ কোটি টাকার বায়েজীদ সংযোগ সড়ক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে আবারও পাহাড় কাটবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পাহাড় কাটা হবে। তবে এখনও চুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সেই প্রতিবেদন সিডিএ’র কাছে আসেনি বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া প্রকল্পটির কাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মূল শহরের যানজট নিরসনে এ বাইপাস সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, সড়কটি পুরোপুরি চালু হলে বিশ্বমানের শহর ও পর্যটনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট থেকে বায়েজীদ পর্যন্ত এ সড়কের নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ১৯৯৭ সালে। সেই সময় ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালে একনেকে পাস হলেও আলোর মুখ দেখেনি। পরে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেনের রাস্তাটি নির্মাণে ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আর প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২০ কোটি টাকা।
পাহাড় কাটা নিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের সাথে বিরোধের কারণে কাজ শুরু করতে আরও কিছু সময় দেরি হয়। এদিকে নির্মাণধীন সড়কের দৈর্ঘ্য ৫.৯৬০ কিলোমিটার। যার মধ্যে ১৮টি পাহাড় রয়েছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে এ প্রকল্পের রাস্তা। অনুমোদনের অতিরিক্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে ১০ কোটি টাকার জরিমানার মামলাও চউকের ঘাড়ে এসে পড়ে। এ প্রকল্পের জন্য ৯২০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ মে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়।
প্রকল্পের আওতায় একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজসহ ছয়টি ব্রিজ এবং কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়ের অংশ বিশেষ। বেপরোয়া পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে গেল বছরের শুরুতে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। একেবারে নতুন রাস্তাটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সিডিএ আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নিলেও বাস্তবে ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় পরিদর্শনকারী টিম। সবমিলিয়ে ৬৯ হাজার ২১৯ দশমিক ৭০২ বর্গফুট বেশি পাহাড় কাটা হয় বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শনকারী টিম।
এরপর ২৯ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে শুনানিতে পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করা অভিযোগে সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা ফেরদৌসী।
এরপর ১৩ ফেব্রূয়ারি আরেক শুনানিতে ওই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকেও ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তাছাড়া অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী পাহাড়গুলো লেভেল ড্রেসিং করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় ওই আদেশে। পরে পরিবেশ অধিদপ্তরে ওই জরিমানা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে সিডিএ।
সিডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ডিসেম্বরের শেষদিকে সিডিএ’র পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব দাশ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, রাস্তার এলাইনমেন্টের পাশে স্থিত কয়েকটি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় সেসব পাহাড়ের ঢাল কর্তন বা মোচন প্রয়োজন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর জানমালের সুরক্ষার জন্য ন্যূনতম পরিমাপ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত নিয়ে তা নির্ধারণের জন্য বলা হয়। এ অবস্থায় জানমালের নিরাপত্তা ও পাহাড়ের স্থায়িত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে ন্যুনতম কতটুকু পরিমান পাহাড় কর্তন বা মোচন করলে তা নিরাপদ হবে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য চুয়েটকে অনুরোধ করা হয়।
এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য সিডিএ’র কাছে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে একটি বাজেট চাওয়া গত ২৩ ডিসেম্বর। এরপর সিডিএ ও চুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হয়। কিন্তু চুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন এখনও আসেনি সিডিএ’র কাছে।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, প্রকল্পের প্রয়োজনে সিডিএ পাহাড়ের অংশ বিশেষ কর্তন বা মোচনের অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের আবেদন করে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগর ও জেলা সম্পৃক্ত। কারণ বায়েজীদ পড়েছে মহানগরে আর ফৌজদারহাট পড়েছে জেলায়।
তিনি আরো জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শে সিডিএ ও চুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম যৌথ সার্ভে করেছে। প্রতিবেদন আসলে সেটি দেয়া হবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তর চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেবে এ বিষয়ে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে।