আবারও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি স্থায়ী বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে

35

 

শীতের জন্মমাস আশ্বিন। এখনও শীতের আমেজ না আসলেও বাজারের সবুজ সবজির সমাহার দেখে বুঝা যায়, শীতের আগমন ঘটতে যাচ্ছে শিগ্গিরই। এ দেশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষির যে বিপ্লব ঘটেছে, তাতে এখন আর মৌসুমের প্রয়োজন হয় না। বারো মাসেই সবজিতে ভরপুর থাকে কৃষকের জমি থেকে বাজার পর্যন্ত। পাশাপাশি চাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ভোজ্যতেল, মসল্লাসহ প্রয়োজনীয় সব নিত্যপণ্যের বাজারে কমতি নেই। এলসি খোলা হচ্ছে আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি, আমদানি চলছেই; এরপরও ক্রমান্বয়ে কাঁচা বাজারে শাক-সবজি,মাছ-মাংস, মুদির বাজারে চাল, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ মূল্য বৃদ্ধিকে ভোক্তাসাধারণ অনৈতিক এবং সিন্ডিকেট কারসাজি বলে উল্লেখ করছেন। বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামেও প্রায় সবধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দামের এ ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে মধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য এটি চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপণ্যের এ মূল্য বৃদ্ধির পক্ষে সাফাই গেয়ে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির দোহাই দিচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সুযোগের হাতছাড়া করছেন না, খুচরা ব্যবসায়ীরাও। প্রতিবেদনে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ এবং খুচরা বাজারের একটি সচিত্র মূল্যতালিকাও দেয়া হয়। এতে বাজারদরের উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তির ও কষ্টের কথা স্পষ্ট হয়। বাজারের এ লাগামহীন মূল্য রুখতে স্থানীয প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা সাময়িকই বলা যায়। হঠাৎ করে ভ্রাম্যমান অভিযান এবং হুশিয়ারি উচ্চারণ করে অসাধু ব্যবসায়ীদের দমন করা সম্ভব নয় সেটি অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং এখন প্রয়োজন স্থায়ী ও গঠনমূলক উদ্যোগ। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব)-এর দায়িত্বশীলরা মনে করেন. সরকারের বেতরে থাকা প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের কারণে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অপরদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রধান প্রধান নিত্যপণ্যের জন্য বিদেশের বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকায় বাংলাদেশ সবসময় আমদানি-প্ররোচিত মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে থাকে। ফলে এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের একমাত্র উপায় হচ্ছে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা। সূত্র জানায়, সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে অন্তত ১৪ ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, বিভিন্ন সময়, নানা অজুহাতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্য যে পরিমাণ বাড়ানো হয়, পরে তা আর কমানো হয় না। কাজেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ যাতে দুষ্টচক্রের হাতে চলে না যায়, সে জন্য এখনই সরকারি পদক্ষেপ জরুরি। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে দায়ি ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা লক্ষ্য করছি, সময় ও সুযোগ বুঝে অতি মুনাফালোভী অসাধু একটি চক্র প্রায়ই বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে থাকে, এবারও যার ব্যতিক্রম ঘটবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে সরকারের আন্তরিকতা ও নানামুখি পদক্ষেপ সত্তে¡ও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কেন রোধ করা যায়নি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী গুটিকয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের আইনগত শক্ত কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় টিসিবিকে কার্যকর করাসহ সরকারের উচিত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্তনা হয়। দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকেন। এভাবে একপক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করলেও মূলত এটি যে অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মনে রাখা চাই, কোভিড এর ভয়াবহতা কমলেও সংক্রমণ এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের উচিৎ ভোক্তাদের সাথে মানবিক আচরণ করা। সরকার ও ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দেরি না করে টেকসই বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।