আবারও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে

16

দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময়ধরে করোনা ভাইরাসের যে মহামারি চলমান রয়েছে, তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উপর। দেশের নিম্ন-মধ্য আয়ের মানুষ থেকে সাধারণ খেটে খাওয়া অসহায় গরিবদের অবস্থা একেবারে নাজুকই বলা যায়। ক্ষুদ্র ব্যবসা, চাকুরি ও দিন মজুরের কাজের বাজারে চলছে খরা। প্রায় দেড় কোটির অধিক মানুষের আয় কমে গেছে। গরিবের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় পর্যায়ে রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রয়োজন ছিল সেখানে রীতিমত প্রতিযোগিতা দিয়েই যেন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি শাকসবজির বাজারও। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাজারের মূল্যচিত্র দেখে অনুমান করা যায় অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কী হারে বাড়ছে। দেখা যায়, নিত্যপণ্য আটা-ময়দা, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডিম ও শিশুখাদ্য গুঁড়াদুধসহ ১৩ নিত্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, যা একেবারে অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। মানুষ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আশা করেছিল -এবারের বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ থাকবে। আশ্চার্যের বিষয় হলো, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো করোরোপ করা না হলেও বাজারে হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্যের লংজাম্প পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা অযৌক্তিক। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতিহীনভাবে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বস্তুত বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলেই পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকেন। এভাবে একপক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করলেও এটি মূলত ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি, নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে যখন-তখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই, সেই সঙ্গে অপরাধও। আমরা দেখেছি, অতীতে বহুবার সময় ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে। এবারও পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দোহাই দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এটি একটি ঠুনকো অজুহাত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলে ভোক্তাদের পকেট কাটার উদ্দেশ্যেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এমন প্রসঙ্গের অবতারণা করে থাকেন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন- যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত করা হলে একদিকে যেমন সাধারণ ভোক্তা স্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাÐেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যবসায় মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন কর্মকান্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার ভাবনা থেকে বিরত থাকলে বছরের অধিকাংশ সময় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকার এবারের বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ না করলেও বাজেট প্রস্তাবের মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে চাল, ডাল, গুঁড়াদুধসহ ১৩ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, ব্যবসায়ীরা নিজেদের মোনাফা বৃদ্ধিকরার বাইরে অন্যকিছু ভাবতে চান না। এ প্রক্রিয়ায় তাদের কাছে জনস্বার্থ বরাবরই উপেক্ষিত একটি বিষয়। ব্যবসায়ীদের এহেন আচরণ ও কর্মকাÐ অযৌক্তিক তো বটেই; অমানবিকও বটে। ব্যবসায়ীরা এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরা নিজেরাই মানবিক বিবেচনা নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম না কমালে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে।