আবারও দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের কঠোর বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাক

16

ঈদের পর এবার বাজারে দাম বেড়েছে তিন নিত্যপণ্য-চিনি, তেল ও পেঁয়াজের। একটি দৈনিকে লেখা হয়েছে, কঠোর মনিটরিং-এর কারণে রোজার ঈদের আগে দাম বাড়াতে না পারার প্রতিশোধ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা! তারা কুরবানের ঈদে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় দ্রব্য তেল আর পেঁয়াজের দামের পাশাপাশি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করেছে চিনির দাম। সূত্র জানায়, চিনির মিল মালিকদের কারসাজিতে বাজারে দাম বাড়ছে। দেশে মাত্র পাঁচটি বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চিনি আমদানি করে থাকে। দেশে ডলারের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে তারা চিনির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে এতে সরকার বাধা দেয়। ফলশ্রæতিতে তারা বাজারে চিনির সংকট সৃষ্টি করে। এতে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় চিনির দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখনই প্রশাসন নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগ না নিলে চিনির বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে চিনি উৎপাদনের সরকারের মনোযোগ প্রদান এবং আমদানি অবাধ ও উন্মুক্ত করা গেলে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে। এছাড়া সরবরাহ সংকট না থাকলেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। এদিকে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় দাম বাড়ার চিত্র লক্ষ করা গেছে। টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০.৭৫ শতাংশ বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১ শতাংশ বেশি দামে। একইভাবে বেড়েছে রসুন ও আদার দামও। তেলের দামও ক্রমান্বয়ে বাড়তির দিকে। পাশাপাশি মাছ. মাংস, সকল প্রকারের সবজির দাম আকাশচুম্বি। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিও ফলে রীতিমতো দিশেহারা ভোক্তা। রোজার আগে পেঁয়াজ ছাড়া সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি ছিল। প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং এর কারণে বাজার দামে কিছুটা উত্তাপ কমলেও এখন প্রতিটি পণ্যের বাজার আবারও বেড়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার। এপ্রিলে কমে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৪৭ ডলার। আর বর্তমানে টনপ্রতি ১৭৮১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলে দাম কমেছে ১৭৫ ডলার। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। এখন দেশের বাজারেও তা কমবে। এপ্রিল মাসের তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। সুখবর হচ্ছে, পাম তেলের দাম কমেছে। লক্ষ করা যাচ্ছে, সয়াবিনের দামও কমার দিকে। সুতরাং দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীদের ধারণা সরকার মূল্য বেঁধে দিয়ে দাম কমাতে পারবেনা, বরং আমদানি শুল্ক কমালেই কিছুটা উপকার পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেও প্রতি কঠোর না হয়ে বরং মটিভেশনের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেছেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে আমরা সব পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করছি। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার মিল ও করপোরেট পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যেখানে অনিয়ম পাব সেখানেই আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। আমরা মনে করি, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার দর সবসময় স্থিতি থাকবে-এমনটি ভাববার কোন কারণ নেই। তবে দাম বৃদ্ধির একটি সীমারাখা থাকা বাঞ্চনীয়। দেশের চাহিদা, উৎপাদন এবং আমদানি সম্ভাব্যতা বিচার করে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বাজার দর নির্ধারণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে একটি বাজার নীতিমালা বা কমিশন করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। সামনে কুরবানির ঈদ, জনগণ যেন বাড়তি ভোগান্তিতে না পড়ে সেই দিকে মনোযোগ দিয়ে বাজার দর নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেবে সরকার-এমনটি প্রত্যাশা সকলের।