আবারও ডুবল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আগ্রাবাদসহ নিচু এলাকা

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃষ্টিহীন রোদ ঝলমলে দিনে আবারও প্রবল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নগরীর প্রধান দুই এলাকা খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদ। অমাবস্যা আর পূর্ণিমা এলেই যেন নি¤œাঞ্চলে জোয়ারের পানির থৈ থৈ অবস্থা। এবারও পূর্ণিমার সময়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও আগ্রাবাদের অনেক সড়কে উঠেছে জোয়ারের পানি। পানিতে নিচু এলাকা যে তলিয়েছে শুধু তা নয়, অনেক বাসাবাড়ি, গুদাম, আড়ত এবং দোকানেও প্রবেশ করেছে পানি। এতে নষ্ট হয় মালামাল। ভোগান্তিতে পড়েন দোকানি থেকে শুরু করে বসবাসকারী মানুষজন।
লঘুচাপের প্রভাব ও স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ এলাকাসহ নি¤œাঞ্চল দুই ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। জোয়ারের উচ্চতা বাড়ায় বাসাবাড়ি, বেশ কিছু দোকান ও গুদামে প্রবেশ করে পানি। বাসাবাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় আসবাবপত্র এবং মালামাল ভিজে যায়। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকার পরেও জোয়ারের পানিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে নগরবাসী। কিছুতেই যেন পানির দুর্ভোগ থেকে মিলছে না রেহাই।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়শনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ হচ্ছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পানিতে ডুবছেও। আমাবস্যা, পূর্ণিমাতে নিয়মিত পানি উঠলেও প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ কোনো সংস্থা নিচ্ছে না। এখন জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে।স্লুইস গেটের কথা বারবার বলার পরও এখনো চালু করা হয়নি। স্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যেও জোয়ারের পানিতে ডুবে দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে।
সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়ছে। এর এতে নগরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল এবং বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য থাকায় উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়ছে।
আগারওগাঁও আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, ভারতের ছত্তীসগঢ় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। লঘুচাপ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের উচ্চতা বাড়ছে। উপকূলীয় এলাকা ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গতকাল জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর নিচু এলাকাগুলো। রাস্তা থেকে শুরু করে অলিগলির বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে পানি। নগরের আগ্রাবাদ, ফকির হাট, নিমতলা, গোসাইলডাঙ্গা, সিডিএ আবাসিক, শান্তিবাগ, হালিশহর আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, খাতুনগঞ্জসহ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে জোয়ারের পানিতে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে এসব এলাকায়।
আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হক বলেন, স্বাভাবিক আবহাওয়ার মধ্যেও রাস্তায় পানি উঠেছে। রাস্তা উচু করার পরও জোয়ারের পানি থেকে রেহাই মিলছে না। মহেষখালে স্লুইস গেটের কাজ শেষ হচ্ছে না। কাজটা শেষ হলে এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের কিছুটা হলেও রেহাই মিলতো।
জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার পরও বৃষ্টিহীন অবস্থায় জলাবদ্ধতায় আটকা পড়তে হচ্ছে চট্টগ্রামবাসীকে। অথচ প্রকল্পের অধীনে জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সে স্লুইস গেটগুলো এখনো চালু করা হয়নি। গেট না লাগানোর কারণে খালি পড়ে আছে। এতে সাগরে পানির উচ্চতা বাড়লেই প্লাবিত হচ্ছে নগরীর নিম্নাঞ্চল।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে খালগুলোর মুখে স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলো চালু হলে দুর্ভোগ থাকবে না। এখন পানি আটকানোর কোনো সুযোগ নেই। আগ্রাবাদ এলাকার সড়কগুলো উচু করা হয়েছে, তারপরও সেখানে পানি উঠছে।