আবারও উত্তপ্ত গন্ডামারা ওসিসহ ৬ পুলিশ আহত

72

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুল আলোচিত বাঁশখালীর সমুদ্র তীরবর্তী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহে ঠিকাদারকে বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হয়েছে গন্ডামারা এলাকা। গত বুধবার সন্ধ্যার পর সেখানে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিকসহ ৬ পুলিশ সদস্য হয়েছেন। এসময় পণ্যবাহী ট্রাক ভাংচুর করা হয়েছে বলে ঠিকাদারের অভিযোগ। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাতে গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাঁশখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গন্ডামারা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের উত্তর গেটে গত বুধবার সন্ধ্যার পর দুই দফায় ঠিকাদারের পাইপবাহী গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জেরে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাদেরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। এতে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিকসহ পুলিশের অন্তত ছয়জন সদস্য আহত হন। সংঘর্ষে আহত পুলিশরা হলেন- বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিক (৩৯), উপ-পরিদর্শক মো. মাসুদ (২৮) ও লিটন চাকমা (৩৯), সহকারী উপ-পরিদর্শক নজরুল ইসলাম (৩৫) ও আব্দুল খালেক (৩০) এবং কনস্টেবল মফিজুল আলম (২৮)। আহত পুলিশ সদস্যদের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ছ’টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে অভিযুক্ত গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা লেয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে গ্রেপ্তারের আগে সংঘর্ষের ঘটনায় বাঁশখালী থানায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদার, থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেছে।কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভুক্তভোগী ঠিকাদার সায়মন অভিযোগ করে বলেন, ট্রাকে করে প্রকল্প এলাকায় পাইপ সরবরাহকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর নির্দেশে তার সহযোগী খালেক ও নবী আলম পণ্যবাহী গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়িতে তখন ১৫ লাখ টাকার পাইপ ছিল। তারা গাড়ি থেকে কিছু পাইপ লুট করে নিয়ে যায়। হামলায় গাড়িটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নূর আহমেদ বলেন, বাঁশখালী থানার একটি মামলায় লেয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূলত বাঁশখালী থানা থেকে আমাদের রিক্যুইজিশন দেয়ার পর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের আনোয়ারা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুল ইসলাম সুমন বলেন, বাঁশখালীর গন্ডামারায় তার নির্দেশে গাড়ি ভাংচুর ও মালামাল লুট করার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে থানা থেকে পুলিশ গেলে তার অনুসারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে ও হামলা করে। এতে বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিকসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গন্ডামারা এস এস পাওয়ার প্ল্যাট কয়লা বিদ্যুৎ এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর অনুসারীরা। তারা পাওয়ার প্ল্যান্টে কথায় কথায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সংঘটিত করছিল। বর্তমানে পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাবের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র বণিক গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূর্বদেশকে বলেন, হামলার ঘটনায় পুলিশের চার-পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছে। আমিও পায়ে আঘাত পেয়েছি। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জেনেছি। আমি থানার বাইরে থাকায় বিস্তারিত সব বলতে পারছি না।
এদিকে, চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীকে গ্রেপ্তারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়তে পারে- এমন শঙ্কায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গন্ডামারা পুলিশ ফাঁড়িতে কমর্রত পরিদর্শক ফরহাদ আহমদ বলেন, আগের দিনের একটি হামলার ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাইনের ৩০ জনের মতো পুলিশ সদস্য এখানে আছে। আরও কিছু থানায় রাখা হয়েছে।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তর গেটে মেসার্স আনছার হোটেলের সামনে আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায়সময় ঘটনা হয়। সব ঘটনা বাইরের মানুষ জানে না। সেখানে সাপ্লাইয়ের কাজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান। তবে এস.আলম বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমন্বয়কারী ফারুক আহমেদ বলেন, যে সমস্যাটি হয়েছে সেটি প্রজেক্টের বাইরে। সেখানে কি হয়েছে আমি জানি না।