আবারও আলোচনায় কালুরঘাট সেতু সংস্কার নয় নতুন সেতু চাই

31

চট্টগ্রামের মেয়াদোত্তীর্ণ পুরোনো কালুরঘাট সেতু সংস্কার না কি নতুনভাবে নির্মাণ, এ নিয়ে আবার শুরু হয়েছে আলোচনা। সেই সাথে চট্টগ্রামবাসীর মনে আশার সঞ্চার হয়েছে রেল মন্ত্রণালয় সচিবের কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন ও রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফজলে করিম এমপি’র বক্তব্যে। আশা করা যায়, সেতুটির নির্মাণকাজ সহসা শুরু হবে। সূত্র জানায়, গত শুক্রবার সেতুটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর। পরিদর্শন শেষে তিনি আগামী বছর সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর কথা জানান সাংবাদিকদের। এরপর থেকে আবার কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি নতুন করে নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সেতু নির্মাণকাজ শুরুর জন্য সময় বেঁধে দিয়ে এ এলাকার প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল একবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয় সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর দাবিতে। কিন্তু নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ আটকে থাকায় এলাকার লোকজনের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। এরপর বর্তমান সংসদ সদস্য মুছলেম উদ্দীনও কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। রাউজান সংসদীয় আসনের সদস্য ও রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে এ সেতুটি পুনণির্মাণের সরকারের উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। এরমধ্যে শুক্রবার সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর সেতুটি পরিদর্শন করে বর্তমান সেতুটি সংস্কার করে নতুন একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংবাদ কর্মীদের বলেছেন। এ সময় তিনি বলেন, নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ব্যাপারে অর্থায়নের একটি বিষয় আছে। আমরা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছি। অর্থায়নের ব্যাপারে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে। তারা অর্থায়ন করবে। তবে এখনো আমাদের ফাইনাল যে চুক্তি সেটি হয়নি। ঋণের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত থাকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে কালুরঘাট সেতুর অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চয়তা পেয়েছি। কোন কোন শর্তে হবে, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। সহসা কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু হবে। অর্থায়নের বিষয়ে এ বছরের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে। আর সেতু নির্মাণকাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতে। অপরদিকে কালুরঘাট সেতু ও রেলের সম্পত্তি এবং নগরবাসীর অন্যতম প্রধান বিনোদন কেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী সিআরবিতে প্রস্তাবিত হাসপাতাল নিয়ে দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবিএম ফজরে করিম চৌধুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, কালুরঘাটে নতুন সেতু অবশ্যই হবে। কতদিনের মধ্যে হবে এ বিষয়টি নিয়ে আমি আপাতত কিছু বলতে চাই না। তবে এটুকু বলতে পারি, কালুরঘাটে নতুন সেতু হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন দ্রæত চালু হবে। তার আগে কালুরঘাটে যে সেতুটি আছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এটিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। ভারী ইঞ্জিন ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। যাতে নতুন সেতু নির্মাণ হওয়া পর্যন্ত এ সেতুটি টিকবে এবং টেকসই হয়। কালুরঘাটে বর্তমান সেতু দিয়েই আগেভাগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হয়ে যাবে।
সিআরবির হাসপাতালটি কুমিরায় সরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এ সংসদ সদস্য বলেন, চট্টগ্রামে হাসপাতালের দরকার আছে। যদি সিআরবিতে হাসপাতাল করা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য আমরা একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছি। প্রয়োজনে এ হাসপাতাল কুমিরা টিবি হাসপাতালের যে জায়গাটি আছে সেখানেই হোক। সূত্র জানায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় কালুরঘাট সেতু। শুরুতে এটি রেল সেতু হিসেবে ব্যবহার হতো। পরে তিরিশের দশকে সেতুটি দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহন চলাচল শুরু করে। এরই মধ্যে সেতুটি বয়স ৯০ বছর পার হয়ে গেছে। ভারি যানবাহন চললেই দুলে ওঠে। ট্রেন চলাচলের সময় সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে সেতুতে যানবাহন আটকে গেলে চরম দুরবস্থায় পড়েন সেতুর উভয় পাড়ের যাত্রীরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে সেতুর ওপর লাইনচ্যুত হয় তেলবাহী ওয়াগন। এতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়। সেতুর চরম দুরবস্থা থেকে দ্রæত মুক্তি চান এলাকার লোকজন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, পুরোনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলতে পারে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের দিকে কক্সবাজার রুটে পর্যটকবাহী এবং যাত্রীবাহী ও লোকাল ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এজন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ চলছে। সরকারের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মেঘা পরিকল্পনাকে সফল করতে বর্তমান সেতুর সংস্কারের পাশাপাশি দ্রæত নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে-এমনটি প্রত্যাশা করছে চট্টগ্রামবাসী।