আবরও বৃদ্ধি করা হলো সাধারণ ছুটি এটি যেন ঈদের ছুটি না হয়!

72

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার পঞ্চমবারের মত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করল। এ মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করার লক্ষে সরকার মূলত এ ছুটি বাড়িয়েছে। পক্ষান্তরে সরকারের এ মহৎ উদ্দেশ্য দেশের মানুষ কতটুকু আমলে নিচ্ছে-তা বিবেচনার বিষয়। সম্প্রতি বিভিন্ন কলকারখানা ও বাজার-দোকানপাট খুলে দেয়ার ফলে সাধারণ মানুষের বাজারে-সড়কে অবাধ চলাফেরার দৃশ্য সরকার ও সচেতন নাগরিকদের হতাশ করছে। এ অবস্থায় বর্ধিত ছুটি যেন সরকারের উদ্দেশ্যের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আমরা জানি, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘটনার খবর আসার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান স্থগিত করে সীমিত আকারে তা পালনের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ও স্থান বিশেষ লকডাউন করা হয়। সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাশাপাশি সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলে বিশ্বের আরো অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে। এরপর সেই অঘোষিত লকডাউন বা ছুটির মেয়াদ চার দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়। মানুষকে ঘরে রাখতে সরকারঘোষিত ছুটি এখনো চলছে, দোকানপাট আর মসজিদের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ শিথিল হলেও গণপরিবহনের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল; কিন্তু রাস্তার চিত্র ভিন্ন। স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণ রোধ করা যায়নি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন সংক্রমণের রেখচিত্র নিম্নগামী তখন বাংলাদেশে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ২০২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলেন ২০ হাজার ৬৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৫ জন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট সুস্থ হয়েছেন ২৭৯ জন। এ নিয়ে এখন পর্যনমশ সুস্থ হলেন তিন হাজার ৮৮২ জন। বুলেটিনে বলা হয়, দেশে কোভিড-১৯ রোগী প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেই হিসাবে ৬৯তম দিনে এসে শনাক্ত ২০ হাজার ছাড়ালো।
বুলেটিনে দেখা গেছে, পরীক্ষার সংখ্যাবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ২৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো যুক্তিযুক্ত। উল্লেখ্য যে, ২৯ ও ৩০ মে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় কার্যত ৩০ মে পর্যন্ত মূলত ছুটিতে থাকছে দেশে। তবে এ জন্য ১৫টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
কথা হচ্ছে, শর্তসাপেক্ষে দেয়া এ ছুটির শর্তগুলো ছুটি ভোগকারীরা কী বুঝেন? এর আগেও তো শর্ত দেওয়া হয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি ও সাধারণ ছুটির নিয়ম কোনোটাই কি কঠোরভাবে মানা হয়েছে? বরং দেখানো হয়েছে চরম শৈথিল্য। মানুষ যদি নিষেধ অমান্য করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শপিং মল বা দোকানপাটে ঈদের কেনাকাটা করতে যায়, তাহলে তো এই সাধারণ ছুটি কোনো কাজে আসবে না। কাজেই শুধু ছুটি বাড়ানো নয়, মানুষের অকারণে ঘরের বাইরে আসা বন্ধ করতে হবে। এখানে মনে রাখা দরকার, সরকার বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেও সাধারণ ছুটি দিয়েছে শুধু নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায়। কিন্তু নাগরিকরা সচেতন ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে না পারলে তার ভয়াবহ ফলও তো ভোগ করতে হবে। দেশের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে কিছুদিনের জন্য কঠোর লকডাউন, দরকার হলে কারফিউ দেওয়া যেতে পারে। এবারের ছুটিতে যেহেতু মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ থাকছে, সেহেতু এ উৎসবকে উপলক্ষ করে মানুষ এক স্থান থেকে যাতে অন্য স্থানে যেতে না পারেন- সে দিকে কঠোর নজর রাখতে হবে। একইসাথে দেশের নাগরিকরা সতর্ক ও সচেতন হবে। সকল নাগরিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।