আপিলে সমাধান এলে বিরোধ কি নিয়ে?

32

ওয়াসিম আহমেদ

আইন অনুসারে পুনর্মূল্যায়ন করায় নগরীতে গৃহকর বেড়েছে অনেকগুণ। শুরুর থেকে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ (কসুপ) নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন করদাতারা। প্রথমদিকে আন্দোলন বেশ ঝাঁঝালো থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা করদাতাদের সমর্থন হারাতে থাকে বলে দাবি ওঠে। কারণ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) রিভিউ বোর্ড গঠন করে করদাতাদের সুবিধামত কর নির্ধারণ করছে। এমনকি মেয়রের উপস্থিতিতে সংস্থাটির আটটি রাজস্ব সার্কেলজুড়ে শুনানি হচ্ছে। এতে করদাতাদের মতামতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার বার্তা দিচ্ছে চসিক।
এর মধ্যে আগামী ১৫ মার্চ চার দফা দাবিতে চসিক কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি দিয়েছে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, আপিলে সমাধান এলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ অসুখি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার পূর্বদেশকে জানান, ‘ফেসবুকে দেখছি মেয়র ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ গৃহকর ছাড় দিচ্ছেন, তা তিনি দিতে পারেন না। কেননা আইন অনুসারে ওনি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন। মূলত নগরবাসীকে অন্ধকারে রাখতে বালাম বইয়ে বকেয়া লিখে রেখে ছাড় দেওয়ার নামে মিথ্যাচার ছড়াচ্ছেন।’
এ নিয়ে চসিক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেছেন, ‘বকেয়া লিখে রেখে ছাড় দেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বালাম বই নিয়ে তাদের প্রমাণ করতে বলেন। যা মন চায় তা বললে তো হবে না। করদাতাদের সাথে কথা বলে রিভিউবোর্ড নির্ধারণ করছে কর, মেয়র নির্ধারণ করছে না। আইন না জানলে জেনে নিতে হবে, ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে গুজব ছড়িয়ে সরকারি কাজে বাধা দিলে আইনি সহায়তা নেওয়া হবে।’
বিপরীতে রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ পূর্বদেশকে জানিয়েছেন, বেসরকারি ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫টি হোল্ডিংয়ের মধ্যে আপিলে অংশ গ্রহণ করার জন্য আবেদন করেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ জন, যা অর্ধেকেরও বেশি। এরমধ্যে আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৬৭টি হোল্ডিংয়ের গৃহকরের এসেসমেন্ট পুনর্নির্ধারণ। এ প্রক্রিয়ায় করদাতাদের সন্তুষ্ট করতে পারার দাবি করছে সিটি করপোরেশন।
সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে চলতি অর্থবছরের প্রথমদিন থেকে পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন হারে নির্ধারিত এসেসমেন্ট অনুসারে গৃহকর আদায় শুরু করে সিটি করপোরেশন। অপরদিকে তখনই আন্দোলন শুরু করে আইনটি বাতিলের দাবি তুলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করে কর না দেওয়া এবং চসিকের আপিলে অংশ না নেওয়ার আহŸান জানানো হয়। এতে প্রথমদিকে সাড়াও মেলে। চসিকের রজস্ব সংগ্রহ কমে আসে। তখনই চসিক সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আপিল শুনানি শুরু করে। চসিকের রাজস্ব বিভাগ বলছে, প্রায় দুই লাখ হোল্ডিংয়ের মধ্যে ৫ শতাংশ রয়েছে গৃহকরের আওতামুক্ত, আরও অন্তত ১৫ শতাংশ রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার। বিশেষ করে ফতেয়াবাদ, পতেঙ্গা, বাকলিয়াসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে রাজস্ব আদায়ের হার খুবই কম। ওখানে সিটি করপোরেশনের সেবা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আগে থেকে কর প্রদানে আগ্রহ নেই বাসিন্দাদের। এর মধ্যে চসিকের হিসাবে ১ লাখ ৪০ হাজার সক্রিয় হোল্ডিংয়ের মধ্যে ১ লাখের বেশি আপিলের আবেদনকে ব্যাপক সাড়া বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এমন তথ্য বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের মুখপাত্র কাজী শহিদুল হক স্বপন পূর্বদেশকে জানান, ‘এতো মানুষ আপিলে অংশ নেননি। আমাদের হিসাবে ৫০ হাজার মানুষও অংশ নেননি। রিভিউ বোর্ডের নামে যা কমানো হচ্ছে তা আইনসিদ্ধ নয়। বালামে বকেয়া রেখে দিয়ে প্রহসনের আয়োজন করছে সিটি করপোরেশন। তাই চারটি দাবি নিয়ে চসিক কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। দাবিগুলো হলো, বর্তমানে কর পুনর্মূল্যায়নে শতভাগ মানুষকে আপিল করতে হয়, তা বাতিল করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে কর পুনর্নির্ধারণের নতুন এসেসমেন্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আপিলের নামে যে ২০০ কোটি টাকা ঘুষের বাণিজ্য হয়েছে, দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বশেষ দাবি, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে চসিককে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রতি বছর প্রকাশ্যে গণশুনানি করতে হবে।’
শহিদুল হকের কাছে প্রশ্ন ছিলো প্রথমদিকের আন্দোলনের জোয়ারে কি ভাটা নেমেছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে বেশি সাড়া পাচ্ছি, আলহামদুল্লিাহ। ১৫ মার্চের প্রস্তুতি সভাতেও দুই শতাধিক মানুষ হয়েছে।