আপনি কত দিতে চান-কেউ বলে ৫শ, কেউ বলে ১ হাজার

64

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব সাকেল-৪ (ওয়ার্ড নম্বর ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩ ও ৩৪) এর এসেসমেন্ট রিভিউ বোর্ডের গণশুনানি গতকাল সকালে পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আব্দুচ ছত্তার মিলনায়তনে করদাতাগণের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। আপিল করে করদাতারা করছাড় পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরেন।
আপিল শুনানিতে মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বিভিন্ন ওয়ার্ডের করদাতাদের কাছে জানতে চান, আপনারা কে কত কর দিতে পারবেন। এসময় কেউ বলেন পাঁচশ টাকা, কেউ বলেন এক হাজার টাকা বাড়ান, আবার কেউ আগের পরিমাণেই কর দিতে ইচ্ছা পোষণ করলে মেয়র তাদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে কর নির্ধারণ করে দেন। এ সময় মেয়র আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রকাশ্যে সরকারের ট্যাক্স বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।তিনি বলেন, আইন ও বিধি না জেনে আন্দোলন করা ঠিক নয়। গৃহকর সম্পর্কে মানুষের মাঝে দীর্ঘদিন যাবৎ যে ভুল ধারণা ছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসে নগরবাসীকে কর প্রদানের আহবান জানান তিনি। মেয়র বলেন, কিছু অসাধু লোক নগরীর করদাতাদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি তাদের ব্যাপারে নগরবাসীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। মেয়র বলেন, আমি চট্টগ্রামের ছেলে, যে চট্টগ্রামের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছেন, তারা গৃহকর নিয়ে ভোগান্তিতে পড়বেন এটা আমি কখনো হতে দিব না।
মেয়র আরো বলেন, ২০১৭ সালে মূল্যায়ন করা করে অনেক অসঙ্গতি ছিল। যার কারণে সাবেক মেয়র মরহুম এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরবাসী আন্দোলন শুরু করলে সরকার তা আমলে নিয়ে স্থগিত করেছিল। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর ২০২২ সালে তা পুনরায় চালু করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসে, যে কারণে আবার কর আদায়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। তিনি বলেন, কর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দূর করার জন্য ৮টি সার্কেলে আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। এর মধ্যে ৭টি সার্কেলের আপিল বোর্ডে আমার উপস্থিতিতে গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করে করদাতারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ২৭%, বরিশালে ২৭%, রংপুরে ২০% এর কথা উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৭% গৃহকর নেয়া হচ্ছে।
এ সময় করদাতা পাথরঘাটার বাসিন্দা আবুল মুনছুর চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক বিভ্রান্তিকর কথা শুনে গৃহকর নিয়ে ভীত ছিলাম। পরে বিভিন্ন লোকজনের পরামর্শে আপিল বোর্ডে আসলে ৯ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার ভ্যালুয়েশনকে মেয়র ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। অপরদিকে পশ্চিম মাদারবাড়ির মো. এয়াকুব বলেন, আমার ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার ভ্যালুয়েশনকে মেয়র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তারা মেয়রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আন্দোলনকারীদের নেতা অশিক্ষিত ও মুর্খ। তারা না জেনে গৃহকর নিয়ে আন্দোলন করছে। চট্টগ্রামে এমন মেয়র পাওয়া আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি মানুষকে কথা দিয়ে কথা রাখেন।
আপিল রিভিউ বোর্ডের সভাপতি কাউন্সিলর শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, গোলাম মোহাম্মদ জোবাইর, আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রিভিউ বোর্ডের সদস্য প্রকৌশলী শহীদুল আলম, এড. তৌহিদুল আলম, কর কর্মকর্তা মো. সারেক উল্ল্যা, উপ-কর কর্মকর্তা হাসান আহমেদ, তুষার কান্তি দাশ ও বিপ্লব কুমার চৌধুরী। গণশুনানিতে অংশ গ্রহণের জন্য ৩৫০টি নোটিশ প্রদান করা হয়। এতে ৩০০টি আপিল নিষ্পত্তি করা হয়।