আন্দোলন চলবে, উচ্চ আদালতেও যাব

17

নিজস্ব প্রতিবেদক

বর্ধিত গৃহকর বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি চলাকালে হামলার জন্য মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, তাদের উপর মেয়রই ‘গুন্ডাবাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিলেন’, তাই পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলা হয়। হামলার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরিষদের নেতারা আরও জানিয়েছেন, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ‘সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে তাদের আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি ‘অন্যায্য’ গৃহকর আদায় বন্ধে তারা আদালতে যাবেন।
বর্ধিত গৃহকর বাতিলের দাবিতে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। গত বুধবার তারা নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালনে গেলে তাদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) শ্রমিক লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস পপি বলেন, ‘পূর্ব ঘোষিত কর্মস‚চি নগর ভবন ঘেরাও চলাকালে আমাদের সাথে আগত নিরীহ নগরবাসীর উপর সিটি মেয়রের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডা বাহিনী ইট-পাথর দিয়ে আক্রমণ করে। পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে’। হামলায় রাশেদ আমির, নেজামত আলী, মো. রানা, ইমতিয়াজ দিদার, রমজান আলী ও ওলি আহমদ নামে ছয়জন মারাত্মকভাবে আহত হন।
পপি বলেন, মিছিল নিয়ে নগর ভবনের কাছাকাছি টাইগার পাস মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। তাই আমরা সেখানেই শান্তিপূর্ণ অবস্থান করি। মেয়র মহোদয়কে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানালে পুলিশ আমাদের মধ্য থেকে পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছার ব্যতিত অন্য যে কোনো চারজনকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এতে আমরা কিছুটা অবাক হলেও বাধ্য হয়ে চারজন প্রতিনিধি নগর ভবনে যান। তবে পরিষদের প্রতিনিধিদের দেখেই মেয়রের অনুসারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন কর্মসূচিতে কোনোদিন ছাত্রলীগ বা যুবলীগ বাধা দেয়নি। কারণ তারা জানে, এটা তাদের বাবা-চাচাদের আন্দোলন। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়র সাহেব আমাদের সন্তানদের আমাদের অপদস্ত করার জন্য ব্যবহার করলেন!’
সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর পপি বলেন, ‘আমরা নগরবাসীর প্রতি মেয়রের এমন আচরণ প্রত্যাশা করিনি। এর তীব্র নিন্দা জানাই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় মেয়র মহোদয় এতটা অহংকারী যে তিনি নগর ভবনে অবস্থান করার পরও স্বয়ং উনার নিজ নাগরিকদের কাছ থেকে স্মারকলিপিটি গ্রহণে আনাগ্রহ প্রকাশ করেন। অগত্যা আমরা উনার প্রধান নির্বাহীর হাতে আমাদের স্মারকলিপিটি প্রদান করি’।
পপি বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্বাস করি, এই হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে চট্টগ্রামবাসীর থেকেও ব্যক্তিস্বার্থ অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ। গণস্বার্থবিরোধী এই ধরনের মানসিকতার লালন করে তিনি নগরপিতা হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন’।
বুধবার পরিষদ নেতারা নগর ভবন ছেড়ে যাবার পর মেয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, একটি ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ এই আন্দোলন করছে।
নগর ভবনের আশেপাশে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ও তৎপরা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে এখানে এসে স্লোগান দিতে বলিনি। তবে আমি একটি দলের নেতা এবং দলের মনোনয়নে মেয়র হয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই মেয়রকে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে কেউ যদি স্বউদ্যোগে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়, তাহলে আমার কিছু করার নেই’।
পপি বলেন, ‘মেয়রের গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, তিনি যতক্ষণ দায়িত্বে আছেন ততক্ষণ তিনি নগরবাসীর গৃহকরের এই ন্যায্য দাবী মেনে নেবেন না। তাই আগামি কর্মসূচি হিসেবে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হবে। আর উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এই অন্যায্য গৃহকর আদায় বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব’।
মারধর ও হামলার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন কি না- জানতে চাইলে পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘আমরা কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে এর জবাব দেব’। মেয়রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মেয়র বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আখ্যা দিয়ে বক্তব্য রাখছেন। কীসের ভিত্তিতে তিনি এমন কথা বলতে পারেন? আমার বাবা হাজী আবুল খায়ের মেম্বার বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুল মালেক, ইসমাইল মনু, এরশাদ হোসেন, আবদুর রহিম, অলি আহমদ, আবুল কাশেম, আব্দুর রাজ্জাক ও কামাল উদ্দিন প্রমুখ।