আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সাক্ষরতার কোন বিকল্প নেই

35

গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার দেশব্যাপী সরকারি-বেসরকারী পর্যায়ে সীমিত আকারে পালিত হয় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। ‘কোভিড-১৯ সংকট : সাক্ষরতা শিক্ষায় পরিবর্তনশীল শিখন-শেখানো কৌশল এবং শিক্ষাবিদদের ভূমিকা’- এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে গতকাল যখন পালিত হচ্ছিল আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি, তখন করোনার প্রভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। তবে অনলাইন পদ্ধতিতে শ্রেণি কার্যক্রম সচর রেখে কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে নানাভাবে। দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই সাড়ে পাঁচ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এ স্থবিরতা কাম্য না হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার স্বার্থে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির কবে নাগাদ উন্নতি হবে, কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তা এখনও সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে আরো বিকল্প পথ খুঁজে বের করা জরুরি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে বিবিএস ঘোষিত সাক্ষরতার হার প্রশ্নাতীত নয়। কারণ বিবিএস যে পদ্ধতিতে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করে, তা সাক্ষরতার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা কতটা পূর্ণ করে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বস্তুত সাক্ষরতার হার ও সংজ্ঞা নিয়ে এখনও বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী সাক্ষরতা হল পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লেখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। অর্থাৎ সাক্ষরতা বলতে লেখা, পড়া, গণনা করা ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে বোঝায়। দেশে সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদÐ নির্ধারণ করেছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকারিভাবে সাক্ষরতার হার নিয়ে জরিপ করার সময় এতকিছু যাচাই করা হয় না। বেসরকারি হিসাবে দেশে সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশের মতো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এটা অনস্বীকার্য যে, দেশে সাক্ষরতার হার বাড়ছে। তবে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় মন্থর। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। এ লক্ষ্য থেকে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে সাক্ষরতা বৃদ্ধির চিত্র সন্তোষজনক নয়। কাজেই সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির গতি আরও বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ২১ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
পিইডিপি-৪-এর আওতায় ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসডিজি-৪ অর্জনের লক্ষ্যে নন-ফরমাল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগাম নামে একটি কর্মসূচিভিত্তিক প্রকল্প প্রস্তাবও প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালে এটি একটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে সন্দেহ নেই। তা সত্তে¡ও দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে বিশাল অক্ষরজ্ঞানহীন জনসংখ্যাকে নিরক্ষরমুক্ত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ জরুরি।