আনোয়ারা-কর্ণফুলীর রাজনীতিতে ওয়াসিকাকে ঘিরে নতুন মেরুকরণ

60

কর্ণফুলী প্রতিনিধি

কর্ণফুলী উপজেলায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের গণসংবর্ধনা সভায় যাননি উপজেলা আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব কমিটির নেতৃবৃন্দ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী হওয়ায় এ গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দেননি বলে জানা গেছে।
এদিকে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় আ.লীগের রাজনীতিতে ওয়াসিকা আয়শা খানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। ওই মেরুকরণের নতুন পথে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পদবঞ্চিত ও অবহেলার শিকার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সকাল থেকে বাধ্যযন্ত্র বাজিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন লোকজন। বেলা ১১টা বাজতেই লোকে-লোকারণ্য হয়ে হঠে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেক চত্ত¡র। তাতে বেলা ১২ টায় যোগ দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। যোগ দিয়ে তিনি বলেন, হতাশ হওয়া যাবে না, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আমার পিতা কখনো আনোয়ারা-কর্ণফুলীকে আলাদাভাবে দেখেননি। আমিও আপনাদের আলাদা করব না।
জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলায় প্রায় ১২ বছর ধরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপি তার প্রয়াত পিতা আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময়ের মধ্যে তার কাছে অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সরাসরি কথা বলতে বা সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদ বলেন, ভ‚মিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী রিদওয়ানুল করিম সায়েম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীসহ গুঁটিকয়েক রাজনীতিবিদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো পুরো রাজনীতি।
স্থানীয় লোকজন জানান, আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে সাবেক ভ‚মিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সায়েমের। কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে ফাঁক-ফোঁকর গলে কেউ গেলেও সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের পাঠানো হতো একান্ত সহকারী রিদুয়ানুল করিম সায়েম অথবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা যুবলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে। এরপর ওই নেতৃবৃন্দের ইচ্ছের উপর ঝুলে থাকত মানুষের সমস্যার ঝুলি। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের মর্জির উপর নির্ভর করে গঠন করা হয়েছে প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি। তাতে ত্যাগী নেতা ও কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর ফলে উপজেলার সর্বত্র নেতাকর্মীদের মাঝে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের জন্ম হয়। কিন্তু বিকল্প নেতৃত্ব না পাওয়ায় এর প্রকাশ ঘটেনি। ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তার পক্ষে এক ধরণের জনস্রোত দেখা দেছে।
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির উদ্যোগে গতকাল শনিবার অর্থ প্রতিমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হলেও তাতে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান তালুকদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম হকসহ এসব কমিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়নি।
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসরাম আহমদ জানান, আমরা নেতৃবৃন্দকে দাওয়াত দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ব্যক্তিগত কাজ থাকায় আমি ও সাধারণ সম্পাদক যোগ দিতে পারিনি।
দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমদের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পটিয়া-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ডা. নাসির উদ্দীন মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শিবলী, সদস্য সালাউদ্দিন শাকিব, দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন ইমরান, পটিয়া পৌর মেয়র আইয়ব বাবুল, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালখালীর পৌর মেয়র মো. জহুরুল ইসলাম জহুর, দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পাট ও বস্ত্র বিষয়ক সম্পাদক আশীষ কুমার সিংহ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম সালেহ, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক চৌধুরী প্রমুখ।