আনোয়ারায় ৪৬, সীতাকুন্ডে ৫৮ সন্দ্বীপে ১১২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত

18

পূর্বদেশ ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ মোকাবেলায় চট্টগ্রামসহ রাঙামাটি-বান্দরবানে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা যায়।

আনোয়ারা : আনোয়ারায় ঘূর্ণিঝড় আতংকে দলে দলে মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন। গতকাল রাতে লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলার বায়পুর, বারশত, জুঁইদন্ডী, বরুমচড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সিপিবির ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীরা দিনভর সাধারণ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করছে। সাইক্লোন সেল্টারগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
উপকূলের রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন শরীফ জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত বাড়ার সাথে সাথে এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৮টি জিপ দিয়ে লোকজন সরিয়ে নিচ্ছি। শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছে, লোকজনকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য, সিপিবির স্বেচ্ছাসেবক, গ্রাম পুলিশেরা লোকজন নিরাপদে সরানোর কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজারের বেশি লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আনোয়ারা উপজেলা ১১ ইউনিয়নে ৪৬টি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। তারমধ্যে রায়পুর ইউনিয়নের ১৩টি শেল্টার ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া উপকূলীয় ইউনিয়নসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে ৪টি শেল্টার ও ২টি মুজিবকিল্লা রয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা সিপিপির সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সিপিপির ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে রয়েছে।

সীতাকুন্ড : সীতাকুন্ডে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েয়ে উপজেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও উপকূলীয় এলাকার চারটি স্কুল। সতর্ক করে গতকাল সকাল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপির (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি) ১২৬০ কর্মীকে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম ও কোস্টগাড সদস্যদের। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার বসবাসকারীদের সতর্ক করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যাতে পরবর্তী নির্দেশের সাথে-সাথে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে পারে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৫টি মেডিকেল টিম। অপেক্ষাকৃত ঝুকিঁপূর্ণ সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুন্ড, বাঁশবাড়িয়া, সোনাইছড়ি ও ভাটিয়ারী ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার বসবাসকারীদের ঘরে-ঘরে গিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে। কিছু মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা প্রকাশ করে, তাদের বুঝিয়ে যে কোনভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বে উপকূলীয় ও পাহাড়ধস এলাকায় একাধিক টিম কাজ করছে।

রাঙামাটি : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে গতকাল সোমবার বিকাল ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। একইসাথে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ভারি বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সতর্ক থাকাসহ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে জরুরি সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মামুন মিয়া এ তথ্য জানান। সভায় বলা হয়, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ে পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ববসবাসকারীদের জন্য রাঙামাটি শহরে ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া সভায় জেলার ৯টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি, মেডিকেল টিম ও উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের কারণে ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকতে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জেলা তথ্য অফিস থেকে রাঙামাটি শহরে মাইকিং চালানো হচ্ছে।

সন্দ্বীপ : ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সন্দ্বীপ উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গত রবিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠক আয়োজন করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসার সভাপতিত্বে বৈঠকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সিপিপি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ এবং চেয়ারম্যানদের মানুষের জান-মাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
বেড়িবাঁধহীন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর ও সারিকাইতের বাংলাবাজার এলাকাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার মানুষকে সন্ধ্যার মধ্যে সাইক্লোন শেল্টার ও কিল্লায় পাঠাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সন্দ্বীপের ১১২টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ও ৪টি কিল্লায় মানুষকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসা জানান, রবিবার রাতে পাউবোর প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্যে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে বলে জানান। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরিভাবে ১৭টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। সন্দ্বীপের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সতর্ক সংকেত প্রচার করে নিরাপদ স্থানে লোকজনদের আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। সন্দ্বীপে রবিবার মাঝ রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছি। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষ্যংছড়িতে খোলা হয়েছে ৩০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র। উপজেলার ৫ ইউনিয়নে এসব কেন্দ্র খোলা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিটি ইউনিয়নে পাহাড়ধস ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষদের এসব নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে চলে যেতে মাইকিং করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস জানান, উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ৩০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো আশ্রয় শিবির খোলা হবে। তিনি বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন।
নাইক্ষংছড়ি সদর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, তিনি ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছেন। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে এ শিবিরের আওতায় আনা হয়।
দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান জানান, তার ইউনিয়নে ৭টি অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। কুরিক্ষ্যং, ছাগলখাইয়া, বাঁকখালী, কুলাছি, বাহিরমাঠ, লেবুছড়ি ও উক্যজাই হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে এসব আশ্রয় শিবির।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির আজিজ বলেন, তিনি ইউনিয়ন পরিষদসহ ৫টি আশ্রয় শিবির খুলেছেন।