আনোয়ারায় আরো একটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে

114

রাহুল দাশ নয়ন

আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৫৯০ মেগাওয়াটের আরো একটি কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা আর-এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। গ্যাসে চালানো হলে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২.৯৫ টাকা এবং আর-এলএনজিতে ৫.৪৪ টাকা। ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসেই কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসবে। গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেড এর মধ্যে ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
বিউবো চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারি খাতের পাশপাশি বেসরকারি খাতকেও সমানভাবে উৎসাহ দিচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে উৎপাদনে আনা গেলে এ খাতে সরকারের যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ইউনাইটেড এর ৫৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হবে সবচেয়ে বড়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও এতো আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে এজাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেনি। এ প্রকল্পটি দেশের বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ২২ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা আর-এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। গ্যাসে চালানো হলে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ২.৯৫ টাকা (৩.৬৮৬৭ ইউএস সেন্টস্) এবং আর-এলএনজিতে ৫.৪৪ টাকা (৬.৮০৪৩ ইউএস সেন্টস্)। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটির ৬০ শতাংশের মালিক ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজেস এন্ড কোম্পানি লিমিটেড, ২০ শতাংশের মালিক জাপানের প্রতিষ্ঠান কাইশু ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কোম্পানি ইনকর্পোরেশন এবং বাকি ২০ শতাংশের মালিক জাপানের শোজিট কর্পোরেশন। আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া এলাকার প্রায় ১২ দশমিক ৫ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হবে। এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ বিক্রি চুক্তি (পিপিএ) তে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ ও ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুদ্দিন হাসান রশীদ স্বাক্ষর করেন।
একইদিনে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম পাওয়ার লিমিটেড এর সঙ্গে স্বাক্ষরিত অন্যান্য চুক্তির মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর সঙ্গে ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর সঙ্গে গ্যাস সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট (জিএসএ)।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আনোয়ারায় যে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হচ্ছে এটি প্রায় ৬০০ মেগাওয়াটের। সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রকল্প এটি। বিদ্যুতের যে বাড়তি চাহিদা আছে তা পূরণে অত্যন্ত কার্যকর হবে প্রকল্পটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে চট্টগ্রামের উপর আরো নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে।’
এর আগে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় ৩০০ মেগাওয়াটের জ্বালানি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল মুডলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে ইউনাইটেড গ্রুপ। সর্বাধুনিক মডুলার টাইপ রেসিপ্রকেটিং ইঞ্জিনের সাথে কম্বাইন্ড সাইকেল প্রযুক্তির সমন্বয়ে চট্টগ্রাম শহরে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা যোগ করবে।
ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন সায়েম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় আমাদের ৩০০ মেগাওয়াটের যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আছে তার পাশেই ৫৯০ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হবে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন সরকারের যে মাস্টারপ্ল্যান আছে সেটি কার্যকরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র সহায়ক হবে। আগামীতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে টানেল, কোরিয়ান ইপিজেডের উন্নয়ন হচ্ছে। এগুলোকে টার্গেট করে বিনিয়োগকারীরা উন্মুখ হয়ে আছে। এলএনজি গ্যাস থেকেই এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। তবে কত টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান তিনি।