আনোয়ারার সুরক্ষায় এক বছর সময় চায় পাউবো

83

আনোয়ারা উপকূলে চলমান আছে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে পারেনি উপকূলবাসী। জোয়ারের পানিতে বার আউলিয়া এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ করে। যে কারণে আরো আট কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে নতুন ডিপিপি বরাদ্দ চায় পানি বোর্ড। গত ৬ অক্টোবর নতুন করে ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় এ প্রকল্পে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি টাকা। এত টাকা বরাদ্দে প্রকৃতপক্ষে আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষিত হবে কিনা এমন প্রশ্ন সেখানকার বাসিন্দাদের।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বর্ষাতেও আনোয়ারা উপকূলে পানি ঢুকার সম্ভাবনা আছে। তবে আগামী এক বছরেই আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষিত হবে। এজন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘নতুন বরাদ্দ পাওয়া অর্থে পারকি বিচ এলাকা থেকে সাঙ্গু মুখ পর্যন্ত আট কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ কাজ শেষ হলেই আনোয়ারায় সাগরের পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে। এ প্রকল্পের কাজ দ্রæত শেষ করতে বরাদ্দ পাওয়ার আগেই দরপত্র আহব্বানের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে গেছে। আগামী বর্ষায় অবশ্যই সুরক্ষিত থাকবে আনোয়ারা উপকূল। চলমান আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজ শুরু করা হবে।’
এর আগে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে উপকূলীয় এলাকার পোল্ডার নং-৬২ ও পোল্ডার নং ৬৩/১এ (আনোয়ারা) এবং পোল্ডার নং ৬৩/১বি অংশে পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চলতি বছরের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে শেষ হয়নি। এরমধ্যে বার আউলিয়া এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করলে পুরো এলাকা নিমজ্জিত হয়। গত কয়েক বছর নিয়মিত পানি প্রবেশ করায় তা ঠেকাতে জিও টিউব বসিয়ে পানিরোধের চেষ্টা করে পাউবো। এতে পানি প্রবেশ কমলেও পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি। যে কারণে আরো একটি প্রকল্প চেয়ে ডিপিপি প্রস্তুত করে একনেক সভায় পাঠানো হয়। সম্প্রতি এ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দিলে উপকূলবাসীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। তিনদফা ব্যয় বেড়ে এ প্রকল্পের মোট বরাদ্দ দাঁড়ালো ৫৭৭ কোটি ২৬ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা।
পাউবো সূত্র জানায়, নতুন বরাদ্দ পাওয়া ২৫৭ কোটি টাকার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকা আনোয়ারা উপকূলের বার আউলিয়া থেকে পারুয়াপাড়া বাতিঘর পর্যন্ত ২.১৫ কিলোমিটার সি ডাইক (সমুদ্র অংশ) বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাকি ২৭ কোটি টাকায় নতুনভাবে পাঁচটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হবে।
জিও ব্যাগ ও ব্লক নষ্ট : বার আউলিয়া এলাকায় জোয়ারের পানি ঠেকাতে আপদকালীন বালুভর্তি জিও টিউব বসিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে উপকূলে পানি প্রবেশ কমলেও পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে নতুন বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছে পাউবো। পানি ঠেকাতে বসানো জিওব্যাগ কেটে বালু লুটে নিয়েছে স্থানীয়রা। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জিও টিউবগুলো। যেসব অংশে জিও টিউব নষ্ট হয়েছে সেদিকেই বেশি পানি প্রবেশ করেছে। আবার ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশে ব্লক বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানেই ব্লক বসানো হয়েছে সেখানেই জবরদখল শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাঁধের উপর দোকান বসিয়েছে। এতে বাঁধের ব্লক নষ্ট হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘উপকূল রক্ষায় আমরা কাজ করবো, সহযোগিতা করতে হবে স্থানীয়দের। আনোয়ারায় জিও টিউব কেটে বালু নিয়ে গেছে। আবার নতুন বøকের উপর বসানো হয়েছে দোকানঘর। বিষয়গুলো আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’