আনারস সুস্থ রাখে, ভিটামিন জোগায়

2

হাসিনা আকতার লিপি

পাইনগাছের শক্ত, শুষ্ক ফল অর্থাৎ ’কোন’ এর সঙ্গে ইউরোপবাসী আনারসের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিল। সে কারণে দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোপের অভিযাত্রীরা প্রথমে এই ফল দেখে নাম রেখেছিল পাইনাপল (পাইন+আপেল)। সেটা ষোড়শ শতকের কথা।
তখনকার অপরিচিত ফল আনারস এরপর খুব অল্প সময়েই সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলা যায় এই ফলটি এখন বিশ্বের প্রধান ফলগুলোর একটি। এখন প্রায় সব দেশেই আনারসের চাষ হয়।আনারস কাটতে দক্ষতার প্রয়োজন আছে। সুন্দর করে কাটা আনারস খাওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। পাশাপাশি অনেকে আধপাকা বা পাকা আনারস রান্না করেও খান। মাংস বা মাছের সঙ্গে আনারস অতুলনীয়। কেবল সালাদ খেতে চাইলেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসের সালাদ যেমন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তেমনি সুস্বাদুও।
এ ছাড়া টাটকা আনারসের জুস শরীরের ক্লান্তি দূর করে ঝরঝরে করে তুলে। আনারসের পুষ্টিগুণ: আনারসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্রোমেলেইন। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ’সি’- পাওয়া যায়। এই ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য। পাশাপাশি এই ফল খেলে শরীরে খুব কম ক্যালরি সঞ্চিত হয়। সুতরাং মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে না। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে পাওয়া যায় মাত্র ৫০ কিলোক্যালরি। তা ছাড়া এতে কোনো কোলেষ্টরলও নেই। এতে আছে পেকটিন নামক গুুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার। ভিটামিন ’বি’ কমপ্লেক্সের নানা উপাদান যেমন ফলেট, থায়ামিন, পাইরিওফিন ও রিবোফ্লোবিনও পাওয়া যায় আনারস থেকে। আনারসের উপকারিতা: আরারস দেহের গø্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গয়টার অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ।
এটি আর্থরাইটিস উপশমে সহায়তা করে। তা ছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংসে উপকারী। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালের দুর্বলতা দূর করে। এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ক্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এক কথায়, দেহের পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য এটি একটি অতুলনীয় এবং কার্যকর ফল। তাই আমাদের প্রচুর পরিমাণে আনারস খাওয়া উচিত।

লেখক: ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ল্যাব এইড লিমিটেড (ডায়াগনস্টিক) ও পার্ক ভিউ হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক লিমিটেড, চট্টগ্রাম।