আধুনিক কসাইখানার কাজ তিন বছরেও শুরু হয়নি

66

স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গরু জবাই করার জন্য ডাক্তার নেই। স্বাস্থ্যসম্মত কোন পরিবেশও নেই। বেহাল দশায় তিনটি কসাইখানা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক)। তবে এসব পশু জবাই নয়, ভিন্নকাজে ব্যবহার করার জন্য নামমাত্র মূল্যে ভাড়া নেন ইজারাদাররা। পশু জবাইয়ের এমন বেহাল দৃশ্যে আশার আলো জাগিয়েছে নতুন একটি প্রকল্প। অর্থাৎ পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকায় চসিকের ৮৮ শতক জায়গার উপর হবে এশিয়ার অন্যতম অত্যাধুনিক কসাইখানা।
জানা গেছে, সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যাংকের ৮৩ কোটি টাকা অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এটি। ব্যবস্থাপনায় থাকবে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু অনুমোদনের তিন বছর চললেও কাজ শুরু করতে পারেনি প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। জায়গা পরিদর্শন, বৈঠক, মতবিনিমর আর চিঠি চালাচালিতে আটকে আছে তা।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে পশু জবাইয়ের জন্য কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন তিনটি কসাইখানা রয়েছে। রৌফাবাদ, ফিরিঙ্গিবাজার ও পাহাড়তলীতে রয়েছে এ তিন কসাইখানা। গুটিকয়েক মাংস বিক্রেতা ছাড়া সাধারণ লোকজন এসব কসাইখানায় তাদের পশু জবাই করেন না। সাধারণ লোকজন বিয়ে-মেজবানসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠানে যেসব পশু জবাই করেন, তা তাদের বাসা-বাড়ির সামনে বা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় জবাই করে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও এভাবেই নির্ধারিত স্থানের বাইরে পশু জবাই করা হচ্ছে। অথচ আইনে রয়েছে পশু জবাইয়ের আগে একজন পশু চিকিৎসক পশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন এবং কেবলমাত্র নিরাপদ ঘোষণা হলেই পদ্ধতিগতভাবে তা জবাই হবে। কিন্তু নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না থাকায় অনিরাপদ মাংসই খাচ্ছেন নগরবাসী। এতে চরম ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য।
এশিয়ার অন্যতম আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে পাস হওয়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ‘লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে শতভাগ পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কসাইখানাটি স্থাপনের কথা। এজন্য নগরীর পুরাতন চান্দগাঁও থানা এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ৮৮ শতক জায়গা প্রদান করে। পাঁচ বছর মেয়াদি এলডিডিপি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করার কথা। চট্টগ্রামের কসাইখানার জন্য খরচ ধরা হয় ৮৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে চান্দগাঁও এলাকায় জমি পাওয়া গেছে। এটি হবে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আধুনিক একটি কসাইখানা। কাগুজে প্রক্রিয়া সব শেষ। এখন কাজ শুরু হবে মাত্র। করোনা মহামারির কারণে থেমে গেছে ভৌত নির্মাণ কাজ। এটি দেশিয় ঠিকাদার বাস্তবায়ন করছেন না। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি কমই থাকবে।
যা থাকবে কসাইখানায় : এ কসাইখানায় থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি ভবন ছাড়াও থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসোলেশন, স্মার্ট স্টকিং স্পেস সুবিধা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও বøাড (রক্ত ব্যবস্থাপনা) ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শৃঙ্খলা। যেখানে ১ ঘণ্টায় একসঙ্গে ১০০ পশু জবাই করা সম্ভব হবে। অপেক্ষায় রাখা যাবে ৩০০ পশু। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অর্থাৎ হালালভাবে পশু জবাই, জবাইকৃত পশুর মাংস ফ্রিজিং করার সুব্যবস্থা, পশুর রক্তকে পোল্ট্রি ফিডে রূপান্তর করা এবং অন্যান্য বর্জ্য শতভাগ রিসাইক্লিং ও ইটিপি করা হবে। আশপাশের পরিবেশের উপর কোন ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না। পশুর নাড়ি-ভুঁড়ি, শিংসহ যেগুলো ফেলে দেওয়া হয়, তা এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী মানসম্পন্ন ও হালাল মাংস পাবে, পরিবেশ স্মার্ট থাকবে এবং ক্ষুরারোগসহ গবাদিপশুর নানা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও কসাইখানাটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এরপর সেটি নিজে বা ইজারা দিয়ে পরিচালনা করবে চসিক।
চসিকের এস্টেট অফিসার মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, আমাদের একসময় পশু ডাক্তার ছিল, এখন নেই। তাই পশু ডাক্তার ছাড়াই ইজারা দেওয়ার পর ইজারাদাররা কসাইখানা চালান। নগরীতে যে পরিমাণ গরু জবাই করা হয় সে তুলনায় কসাইখানা নেই। মানুষের মধ্যে গরু জবাইয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার চর্চা কম। আমাদের একজন কর্মকর্তা নিয়মিত অস্বাস্থ্যকরভাবে গরু জবাই করলে জরিমানা করেন। কিন্তু একজন ব্যক্তি পুরো শহরের গরু জবাই মনিটরিং করতে পারেন না। এসবের মধ্যে অত্যাধুনিক কসাইখানাটি হবে একটি মাইলফলক। যত দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে পশু জবাইয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি নিশ্চিত করা এবং গণসচেতনতা সৃষ্টি করা তত সহজ হবে।