আধিপত্যের লড়াই চুয়েট ক্যাম্পাসে

48

তৈয়ব চৌধুরী, রাউজান

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাসে গতকাল রবিবার দুই গ্রুপের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই শিক্ষার্থী। সংঘর্ষে জড়িতরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সমর্থক বলে জানা গেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে চুয়েট ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। গত শনিবার রাত থেকে বিপুল লাঠিসোটা, রামদা, ইট-পাটকেল নিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ক্যাম্পাসে টহল দেয় দুই গ্রæপ। এরপর গতকাল রবিবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হন দুই শিক্ষার্থী। আহতরা হলেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের তামিম এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রাফসান।
জানা গেছে, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম শহরে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে চুয়েটের তার সমর্থকরা। প্রোগ্রাম শেষ হতে দেরি হওয়ায় তারা চুয়েটের রাত ৯টার বাসের মধ্যে একটি বাসকে ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়তে বলেন। তখন বাসে থাকা সাবেক মেয়র নাছির সমর্থকরা আপত্তি জানান। এতে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়।
এর জেরে ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী নাছির সমর্থকরা প্রতিপক্ষকে হলে প্রবেশে বাঁধা দিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হন। এ সময় নওফেল সমর্থকদের অনেকেই ক্যাম্পাসের পিছনের গেট দিয়ে হলে প্রবেশ করে। এরপর নাছির সমর্থকরা তাদেরকে আক্রমণ করতে ড. কুদরত-ই-খুদা হলের সামনে জড়ো হন।
এক পর্যায়ে উভয়ই একে অপর পক্ষের রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করে তাদের বিছানা ও বইপত্র ছুড়ে ফেলে দেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এভাবে ভোর ৪টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময় দুই পক্ষেরই হাতে বিপুল সংখ্যক দেশে তৈরি অস্ত্র দেখা গেছে।
শনিবার রাতের ঘটনার জেরে গতকাল রবিবার দুপুরে শেখ রাসেল হলে নওফেল সমর্থক পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাজিদ নামে এক শিক্ষার্থীর ওপর নাছির সমর্থকরা আক্রমণ করে। তখন নাছির সমর্থকদের প্রতিহত করতে ড. কুদরত-ই-খুদা হল থেকে নওফেল সমর্থকরা দেশে তৈরি অস্ত্র নিয়ে শেখ রাসেল হলে প্রবেশের চেষ্টা করে। নিরাপত্তাকর্মীরা হলের গেট বন্ধ করে দেওয়ায় তারা ব্যর্থ হন। পরে শেখ রাসেল হল থেকে নাছির সমর্থকরা তাদেরকে ধাওয়া করে ড. কুদরত-ই-খুদা হলের সামনে অবস্থান নেন। এতে নাছির সমর্থকদের সাথে বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীও অংশ নেন।
দুই পক্ষের এ সংঘর্ষের ঘটনায় নওফেল সমর্থকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে তামিম নামে এক সাধারণ শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। ল্যাব থেকে ফেরার পথে রাফসান নামে আরেক সাধারণ শিক্ষার্থীর হাতে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাম দা দিয়ে আঘাত করলে তিনি আহত হন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা নিজেদের হলকে কোন পক্ষেরই ঘাঁটি হতে দিবেন না। সাধারণ শিক্ষার্থী ইফফাত হক নিশান জানান, যেহেতু ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এ অবস্থা দ্রুত সমাধান করা যেতে পারে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল হারুন জানান, আমরা ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছি। যেকোন পরিস্থিতিতে চুয়েট উপাচার্যের পরামর্শ এবং আমাদের ঊর্ধ্বতনদের আদেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম জানান, আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে চুয়েট ক্যাম্পাসের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোমবার ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নাছির সমর্থকদের শহীদ তারেক হুদা হল এবং নওফেল সমর্থকদের ড. কুদরত-ই-খুদা হলে শক্ত অবস্থানে আছে। এখন চুয়েটের নতুন শেখ রাসেল হলকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে আনতে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে চলেছে।