আত্মহত্যার ইচ্ছেকেই হত্যা করতে হবে

5

মোহাম্মদ ওয়াহিদ মিরাজ

আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজের ইচ্ছায় জীবন বিসর্জন দেওয়াই হলো আত্মহত্যা, যা প্রত্যেকের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে, আর অসংখ্য মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার জীবনটাকে নিজ হাতে স্বেচ্ছায় বিসর্জন দেয়ার কারণ বিষেজ্ঞগণ তাঁদের গবেষণার আলোকে তুলে ধরেছেন। কারও কারও মতে, ১৯ থেকে ৩৬ বা তদূর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ যেসব কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তার মধ্যে (১) দাম্পত্য কলহ (২) সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব (৩) বেকারত্ব (৪) ডিপ্রেশন (৫) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা উল্লেখযোগ্য। আবার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিশেষভাবে যেসব কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তা হলো (১) পারিবারিক কলহ (২) লোকলজ্জা (৩) সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা (৪) ব্যর্থতা।
কিন্তু ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আত্মহত্যার মূল কারণ হলো (১) অপসংস্কৃতি (২) নৈতিকতা ও মূল্যবোধ না থাকা (৩) ধর্মীয় জ্ঞান ও অনুশাসনের অভাব। আত্মহত্যার মাধ্যমে একটি জীবনই শেষ করে দেওয়া নয় বরং একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা গোটা মানবজাতিকে চরম হুমকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। ভোলার দৌলতখানের এক মসজিদের ইমাম কর্তৃক স¤প্রতি তার মাথার পাগড়ি ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আত্মহত্যার ঘটনা দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে। কারণ যে ইমাম পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফের আলোকে আত্মহত্যার শাস্তি সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করবেন তিনিই কিনা…।
আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন ধর্মে বিশ্বাসী। এ পৃথিবীতে এমন একটি সভ্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেটি ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে গড়ে উঠেছে। আর এমন কোন ধর্ম নেই যে, যে ধর্মে আত্মহত্যাকে স্বীকৃতি বা আত্মহত্যায় উৎসাহিত করা হয়েছে। কাজেই যে তার ধর্মের আদেশসমূহকে তার বুকে ভক্তি সহকারে লালন করবে তার দ্বারা এমন ঘৃনিত কর্ম করা একেবারেই অসম্ভব। তাই একটি নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি সৃষ্টি ও অবক্ষয়হীন সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে নাগরিকদের মধ্যে জবাবদিহিতার অনুভূতি সৃষ্টি, ধর্মীয় জ্ঞান ও অনুশাসন স¤প্রসারণ, লালন ও অনুশীলনের বিকল্প নেই। আকাশ সংস্কৃতির কিছু নিয়মিত সিরিয়াল মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে তুলেছে। ওইসব সিরিয়ালে দেখানো হয় পারিবারিক কলহ, বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য মান অভিমানে আত্মহত্যা করা, নগ্নতা, বিবাহবহির্ভূত রিলেশন ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞগণের ধারণা নগ্নতা, অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি বন্ধ করে সুস্থ সংস্কৃতি সমাজকে উপহার দিতে পারলে আত্মহত্যার প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। ব্যর্থতা মনে করে নিজে ধ্বংসের দিকে পা না বাড়িয়ে কর্মনীতি পরিবর্তন করলেও অনেক সময় সফলতা পাওয়া যায়। পরিশেষে বলা যায়, দুঃখ-দুর্দশা, গøানি আর যত সংকটই আসুক না কেন, সব কিছুতেই সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। ধৈর্য ধারণ করে তার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারলেই আত্মহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ একথা অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই যে, দুনিয়ার কষ্ট পরকালের কষ্টের তুলনায় কোটি কোটি কোটি ভাগের একভাগও নয়। দুনিয়ার সামান্য কষ্ট হতে রক্ষার আশায় যখন এমন জঘন্য অপরাধ করা হবে তখন থেকেই মূলতঃ অবর্ণনীয় কষ্ট শুরু হবে, যা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে আর আত্মহত্যাও করা যাবে না, ফলে তা সহ্য করতেই হবে।