আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পন্ন হয়। একজন ছাত্রনেতা, সফল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মানুষের আস্থা অর্জন করার মতো মহৎ গুণের অধিকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সবসময় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, যেখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একত্রে বসবাস করবে পারস্পরিক সম্প্রীতির মাধ্যমে। পাশাপাশি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র উপহার দেওয়ার চিন্তা-চেতনা তাঁর মধ্যে ছিল। রাষ্ট্রের জনসাধারণ যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ওপর হস্তক্ষেপ করবে না। ধর্মের দোহাই দিয়ে রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক দল গঠন করায়ও তিনি ছিলেন বিরুদ্ধ।
এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন, যা ছিল তাঁর দীর্ঘ জীবনের রাজনৈতিক দর্শনের পরিচায়ক। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল বাঙালি জাতিকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা। এ উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নের জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার সাধন, কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন, যেখানে সরকার ও জনসাধারণ যৌথ উদ্যোগে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সমবায় ব্যবস্থার প্রচলন তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের একটি অন্যতম দিক। একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা উপহার দেওয়াই ছিল তাঁর পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দর্শন। সমাজতন্ত্র কায়েম করাও ছিল তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের আর একটি দিক।
বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সাধনা ছিল শোষণহীন সমাজ গঠন, যেখানে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকবে না, যেখানে প্রতিটি মানুষ জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজন আহার, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ পাবে। বাঙালি জাতির স্বাধীন সত্তাকে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেই লক্ষ্যে সারাজীবন ত্যাগ, তিতিক্ষা করেছেন, আপসহীন সংগ্রাম করে গেছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। ফাঁসির দড়িও তাঁর লক্ষ্য থেকে একচুল নড়াতে পারেনি। তাঁর এ আপসহীন সংগ্রামী ভূমিকা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আদর্শস্বরূপ। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বনির্ভর ও অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার এবং কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার সময়। বঙ্গবন্ধু একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। দেখতেন এ দেশের প্রতিটি মানুষ খেয়ে-পরে থাকবে।
বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করব, সরকার তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পূরণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনকে বাস্তবায়ন করতে পারবে। এতে বঙ্গবন্ধুর আত্মাও শান্তি পাবে।