আতিউর রহমান, খ্যাতনামা বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ। মে ১, ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের মার্চে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর ১৫ মার্চ তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। অর্থনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার কারণে তিনি বেশ পরিচিত। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই তার লেখা অসংখ্য বই রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০১ সালে, তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ এ একজন সিনিয়র গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আতিউর রহমান ১৯৫১ সালের বাংলাদেশের জামালপুর জেলার দিগপাইত ইউনিয়নের পূর্বপাড় দিঘুলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৭০ সালে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলেজের সব ছাত্রদের মধ্যে প্রথম এবং ঢাকা বোর্ডের মেধা তালিকায় পঞ্চম হন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম এবং মেধা তালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং ১৯৭৬ সালে মাস্টার্স পাশ করার পর কমনওয়েলথ স্কলারশীপ নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৭৯ সালে আবার মাস্টার্স করার পর ভর্তি হলেন এমফিল-এ। মাস ছয়েকের মধ্যেই তাকে পিএইচডি-তে ট্রান্সফার করে দেয়া হলো। তিনি পি.এইচ.ডি শেষ করলেন ১৯৮৩ সালে।
১৯৭৫ সালে মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে পি.এইচ.ডি শেষ করে যোগ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ( বিআইডিএস)। এ প্রতিষ্ঠানে ছিলেন প্রায় সাতাশ বছর। এছাড়াও তিনি জনতা ব্যাংক অফ ডিরেকটরসের চেয়ারম্যান, সোনালী ব্যাংকেরপরিচালনা পর্ষদের সদস্য, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৭ সালে দারিদ্র দূরীকরনে বিভিন্ন নির্দেশনার পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য মালদ্বীপে প্রেরিত জাতিসংঘের মিশনে নেতৃত্বদান, ১৯৯৪ সালে ইউ.এন.ডি.পি কান্ট্রি প্রোগ্রাম-ভি এর মিড-টার্ম রিভিউ এর সদস্য, ১৯৮৯; সালে এগ্রিকালচার সেক্টর রিভিউ এর অংশ হিসেবে ইউ.এন.ডি.পি ঢাকার জন্য ‘ক্রেডিট ফর দির পুওর’ নামে একটি স্টাডি করা ইত্যাদি কাজগুলো উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও দেশে এবং দেশের বাইরের কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
মানবিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক তিনি ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ স্মারক, ২০১১ পুরস্কারেভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও, ড. রহমান বাংলাদেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নের অসামান্য অবদান রাখায় শেলটেক পুরস্কার, ২০১০-এ ভূষিত হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য ফিলিপাইনের দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘গুসি পিস প্রাইজ ফাউন্ডেশন ‘যে গুসি শান্তি পুরস্কার-২০১৪’ ঘোষণা করে। এখানে তাকে ‘পুওরম্যান ইকোনোমিস্ট’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। সূত্র : উইকিপিডিয়া