আতঙ্কে ‘ঘর ছাড়ছেন’ বিএনপি নেতাকর্মীরা

52

প্রচারণায় হামলা, এলাকায় এলাকায় পুলিশের তল্লাশি ও মামলাতে আতঙ্কিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। দিনের সময় গণসংযোগসহ দলীয় কার্যক্রমে অনেক নেতাকর্মী সক্রিয় অংশ নিলেও রাতের বেলায় নিজ ঘরে থাকছেন না। আতঙ্কিত নেতাকর্মীরা আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ কোন জায়গায়। হামলা-গ্রেপ্তারের আতঙ্ক থাকলেও নির্বাচনে মাঠ না ছাড়ার দৃঢ়তা আছে নেতাদের।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। নিজেরা নিজেরাই ঘটনা বানিয়ে পূর্বের ন্যায় মামলা করছে। এলাকায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। পূর্বের ন্যায় একই স্টাইলে সবগুলো মামলা সাজানো হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে বিএনপিকে ধমিয়ে রাখা যাবে না। নির্বাচনের মাঠে বিএনপি শেষ পর্যন্ত থাকবে।
নির্বাচনের প্রচারণায় দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় বুধবার রাতে নগরীর তিন থানায় দায়ের হয় পৃথক তিনটি মামলা। এ তিন মামলায় আসামি করা ১৪৪ জনের সবাই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থক। মামলার পর থেকে আসামিরা ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাইরে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের। এরপরও অনেক নেতাকর্মী সক্রিয় থাকলেও অনেকে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন নিজেকে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মনোনীত মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ আজম বলেন, মোহরাতে বিএনপির অবস্থান অতীতের ন্যায় একই আছে। অন্যান্য এলাকা থেকে মোহরা কিছুটা ভিন্ন। এলাকার স্বার্থে এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ভাগ নেই, সম্প্রীতি আছে। কয়েকদিন ধরে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ির তথ্য চেয়ে হয়রানি শুরু করেছে। আবার নির্বাচনের দিন বহিরাগত লোক এনে কেন্দ্র দখল করবে, এমন প্রচার চলানো হচ্ছে। এসব কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। কর্মীরা ভয়ের মধ্যে আছে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বুধবার রাতে নাসিমন ভবনস্থ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত থাকা অবস্থায় বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনের প্রধান কার্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী-ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এসময় মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ও আবু সুফিয়ানের গাড়ি ভাঙচুর করে। একই রাতে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, মেয়র প্রার্থীর মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব মো. ইদ্রিস আলী, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মহানগর বিএনপির সদস্য মনজুর আলম মনজু, থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, থানা যুবদলের আহবায়ক মোহাম্মদ আলী সাকী, হালিশহর থানা পুলিশ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি এম এ গফুর বাবুল, উত্তর পাঠানটুলি ওর্য়াডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মহসিন, যুবদল নেতা নয়ন, সামিউল, ইউসুফ, ডবলমুরিং থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া, বিএনপি নেতা হালিম, ইলিয়াছ, সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে।
ওইদিন সন্ধ্যায় বাকলিয়া খাজা রোড বলিরহাটে যুবদলের গণসংযোগে পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী হারুনের সমর্থিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে কয়েকজন নেতাকর্মীকে আহত করে। এর দুইদিন আগে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে। খুলশীতে বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম স্বপন, বাকলিয়ায় থানায় দক্ষিণ বাকলিয়া ওর্য়াড কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়াছিন চৌধুরী ছেলে ছাত্রদল নেতা সানি, ও কালু, হালিশহরে যুবদল নেতা মুরাদ, মাবুদ ও কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বানচাল করার জন্য আওয়ামী লীগ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। গত দুই-তিনদিন ধরে পতেঙ্গা থেকে শুরু করে কালুরঘাট পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীসহ দায়িত্বশীল নেতাকর্মীকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, নাসিমন ভবনস্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাদের ক্যাম্প তারা ভেঙে ইস্যু তৈরি করে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা করেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করা হচ্ছে। যেখানে নেতাকর্মীরা অনুপস্থিত, সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারকে হেনস্থা করা হচ্ছে।
সংঘাতের ঘটনার পর থেকে প্রচারণায় নিয়োজিত নেতাকর্মীরা সতর্কতা অবলম্বন করে চলছেন। এমনকি কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আছেন আতঙ্কের মধ্যে। নির্বাচন কমিশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নানা অভিযোগ জমা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ না থাকলেও অভিযোগের শেষ নেই বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও।
১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম দুলাল বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার দলীয় প্রার্থীরা রাতের আধারে পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে। বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব করে তারা জয় ঠেকাতে পারবে না।