আতঙ্কে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’

82

নগরীর ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’ বিরাজ করছে আতঙ্ক। যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর সে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। এতে টেন্ডারবাজ-চাঁদাবাজরা লাপাত্তা। অনেকে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও বিমানবন্দরে কড়াকড়ির কারণে সফল হচ্ছে না। আমিরাত যাওয়ার চেষ্টাকালে বিমানরবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান। ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, জি কে শামীম, সফিকুল ইসলাম ফিরোজ ও লোকমান হোসেনসহ প্রভাবশালী নেতাদের।
তথ্যানুয়ায়ী, চট্টগ্রামেও টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অনিয়ম, দুর্নীতি, দখলবাজি করে অনেকে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। চট্টগ্রামে অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজির ঘটনা ঘটে। নিরবেই চলে টেন্ডারবাজি। এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। নিয়োগ বাণিজ্যেও লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা।
যুবলীগ-ছাত্রলীগের অনেকে নানা অপকর্মে জড়িত। তারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ইয়াবা কারবার করে শত কোটি টাকার মালিকও বনে গেছেন অনেকে। মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও তাদের দাপট। তাদের রয়েছে বাড়ি, গাড়িসহ বিপুল সম্পদ এবং কাড়ি কাড়ি টাকা। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড় পাচার করে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। কতিপয় জনপ্রতিধির বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। নানা অপকর্মের মাধ্যমে এসব জনপ্রতিনিধিরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামে ইয়াবা চক্র শক্তিশালী অবস্থানে। টেকনাফ-কক্সবাজারের সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে চক্রটি। নগরী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান। তাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকার মালিকও রয়েছে।
চকাবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাং গডফাদার হিসেবে পরিচিত নুর মোস্তফা টিনুকে গ্রেপ্তারের পর নগরীতে শীর্ষ সন্ত্রাসী-গডফাদারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এরই মধ্যে গত রবিবার রাতে আগ্রাবাদে আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক গডফাদার খোরশেদ আলম র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
সবমিলিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযান, গ্রেপ্তার ও ক্রসয়ায়ারকে ঘিরে আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তারা আগে প্রকাশ্যে ঘুরলেও বর্তমানে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাদের সতীর্থরাও লাপাত্তা। রেল, পিডিবি, খাদ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডারবাজরা আপাতত সেখানে আর নেই। গা ঢাকা দিয়েছেন। রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকারী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর তিন মাস আগেই দুবাই পাড়ি দিয়েছেন। আরেক নিয়ন্ত্রক সাইফুল আলম লিমন, রিটু দাশ বাবলু, আপাতত সিআরবিতে নেই। চান্দগাঁও এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার এসরারুল হকও নেই এলাকায়। নাসিরাবাদ এলাকার মহিউদ্দিনকেও দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে এলাাকাবাসী।
কিছুদিন আগেও প্রতিটি এলাকায় কিশোর গ্যাং ও তাদের বড় ভাইয়েরা ঘুরাঘুরি করলেও এখন আর তাদের দেখা যাচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ভয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকারীরাও এলাকায় নাই।
র‌্যাবের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মাহবুবুল আলম পূর্বদেশকে বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের নাম-ধাম সব আমাদের কাছে আছে। কেউ পার পাবে না। তাদের খুঁজে বের করা হবে। অপরাধী যেই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোন দল বা মত নয়, অপরাধী হিসেবেই তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজদের মদদদাতারাও আর প্রকাশ্যে নেই। তাদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ আমিরাত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সরকারের নির্দেশে বিমানবন্দরে কঠোর অবস্থানে ইমিগ্রেশন বিভাগ। গত ক’দিন থেকে ভ্রমণ ভিসায় আমিরাত সফরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।