আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীদের সুরক্ষায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই

22

আজ সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল। উপক‚লীয় অঞ্চলের লাখো মানুষের বেদনার দিন, স্বজন হারানোর দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে এক মহাপ্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসে লÐভÐ হয়ে যায় বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা। ওই প্রাকৃতির দুর্যোগের আজ ৩০ বছর। কিন্তু এ ৩০ বছরে দেশের সমুদ্র উপক‚লীয় এলাকার মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমেনি। স্বজন হারানোর বেদনাকে বুকচাপা দিয়ে সহ্য করে থাকলেও যখনি ঘূর্ণিঝড়, তুফান ও প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়, তখন তাদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটাতে হয়। কারণ উপক‚লীয় এলাকার অধিকাংশ বাঁধ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ, অরক্ষিত। যদিও সরকারি খাতায় বড়বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের ফিরিস্তি পাওয়া যাবে, কিন্তু অধিকাংশ বাঁধ এক বর্ষা থেকে আরেক বর্ষা আসতে আসতে নড়বড়ে হয়ে উঠে। এ ধরনের নামেমাত্র বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করে টেকসই বাঁধ ও রিংরোড নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে উপক‚লীয় এলাকার লোকজন দাবি করে আসলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা ঠিকাদারী চক্রের সেই দিকে তেমন ভ্রæক্ষেপ নেই। আমরা এলাকাবাসীর দাবির সাথে সহমত পোষণ করে উপক‚ল এলাকায় যেসব স্থায়ী ভেড়িবাঁধ ও রিংরোড নির্মাণ করা হচ্ছে, তা যেন টেকসই হয়, সেইদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। আমরা আগেই বলছি, ভয়াল ২৯ এপ্রিল উপক‚লবাসীর বেদনার দিবস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মহামারি করোনা সংকট। প্রতি বছর এ দিনটি পালন উপলক্ষে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন থাকলেও গতবছরের ন্যায় এবারও কোনো কর্মসূচি নেই। আজ তাই স্বজনহারানো লাখো মানুষের সাথে আমরা সেই দিন যারা প্রাণ হারিয়েছিল তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের মধ্যরাতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ দেশের উপক‚লীয় এলাকার ওপর দিয়ে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ¡াস আঘাত হানে। এতে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি নিখোঁজ হন আরও ১ লাখ। ৭০ হাজার গবাদিপশু মারা যায়। ওই রাতের তাÐবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে সরকারি হিসাবে জানা যায়। তবে বেসরকারি হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে জানান কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ। গরকির ছোবলে ছেলে হারায় মাকে, মা হারান তার প্রিয় সন্তানদের, স্বামী হারান স্ত্রীকে, স্ত্রী হারান প্রিয় স্বামীকে। সেই ভয়াল রাতের স্মৃতি মনে পড়লে উপক‚লবাসী এখনো আঁতকে ওঠে। সে প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ের ৩০ বছর অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপক‚লবাসী এখনো অরক্ষিত। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এখনো বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে উপক‚লীয় বেড়িবাঁধ। ফলে বিভিন্ন উপক‚লীয় লোকালয়ে সাগরের লোনাজল এখনো প্রবেশ করছে। জানা যায়, কক্সবাজারের মহেশখালীর গত ২৪ বছর ধরে তার এলাকায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ খোলা রয়েছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজারের ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের মধ্যে ৮০০ মিটার এখনো খোলা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৭৩০ মিটার। তবে গত বছর ১১টি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়েছে বলে সূত্র জানায়। একই অবস্থা কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীরও।
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় বেড়িবাঁধ ও রিংরোড প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, একদিকে অরক্ষিত উপক‚ল, অপরদিকে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফলে উপক‚লবাসী আরো বেশি শঙ্কিত। আমরা আশা করি, উপক‚লের অসহায় মানুষ ও তাদের সহায়-সম্পদ সুরক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে আন্তরিক হবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।