আজ লক্ষীপূজা ও প্রবারণা উৎসব

7

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলা বর্ষপঞ্জিকার দিনক্ষণ ও তিথি-নক্ষত্রের গণনা অনুযায়ী আজ রোববার আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি। প্রতিমাসে একটি করে বছরে মোট ১২টি পূর্ণিমা তিথির মধ্যে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি বাঙালি হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দুদের কাছে এই তিথি ‘কোজাগরী’ আর বৌদ্ধদের কাছে ‘প্রবারণা’ পূর্ণিমা হিসেবে সমাদৃত। পূণ্যময় এই পূর্ণিমা তিথিতে হিন্দুরা লক্ষী পূজা আর বৌদ্ধরা প্রবারণা উৎসব উদযাপন করেন। এ উপলক্ষে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হিন্দুদের ঘরে ঘরে আর বৌদ্ধদের বিহারগুলোতে নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন রয়েছে।
‘কোজাগরী’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল, ‘কে জেগে আছ’। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, ভগবান বিষ্ণুর পত্নী দেবী লক্ষীর অপর নাম ‘মহালক্ষী’। ধন-সম্পদের অধিষ্ঠাত্রি দেবী লক্ষী এই তিথিতে ধরায় আসেন তার বাহন পেঁচাকে সঙ্গী করে। তার কাছেই রয়েছে ধন-সম্পদের অফুরান ভান্ডার। তিনি নিজেই ভক্তের ঘরের দরজায় এসে জিজ্ঞাসা করেন, কে জেগে আছ? তিনি যে ভক্ত রাতজেগে তার পূজা ও ব্রত পালন করতে দেখেন, তাকে নিজেই আশীর্বাদ করেন। তার পূজায় ধন-সম্পদের পাশাপাশি সুখ, বুদ্ধি, সৌন্দর্য, খ্যাতি, শক্তি, বিজয়, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন লাভ হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে গৃহবধূরা আজ উপবাস থেকে আলপনা আঁকা, লুচি-হালুয়া তৈরি, নানা উপকরণে দেবীর পূজা ও পাঁচালি পাঠসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা উদযাপন করবেন। প্রতিদিন ঘরে ঘরে দেবী লক্ষীর পূজা হলেও আজকের পুণ্যময় তিথির পূজা তাই কোজাগরী লক্ষীপূজা নামেও পরিচিত।
এদিকে, একই তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা উদযাপন করেন প্রবারণা উৎসব। বৌদ্ধদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর অন্যতম শুভ প্রবারণায় নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন থাকে। প্রবারণা শব্দের অর্থ হল, আত্মসমর্পণ ও আত্মশুদ্ধি। এটি ভিক্ষু সংঘের বিনয়-কর্মের অংশ। মহামতি গৌতম বুদ্ধের সময়কালে শত শত ভিক্ষু সংঘ এই তিথিতে একইস্থানে অবস্থান করে ধর্ম ও বিনয় শিক্ষা করতেন। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাব্রত পালনের শেষপর্যায়ে প্রবারণা উৎসবের আয়োজন করা হয় বৌদ্ধ বিহারে। উৎসবের আনুষ্ঠানিকতায় পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ, বুদ্ধপূজা, মধ্যাহ্ন ভোজন, ভিক্ষুসংঘকে দান এবং সন্ধ্যার পর ফানুস ওড়ানোসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে।