আজ যা আমার আপনার লজ্জা, তা আমাদেরই

13

মিনু মিত্র

* সন্তান যখন হামাগুড়ি দেয় তখন সে অনেক আঘাতও পাই। আমরা সেই হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চাটাকে তৎক্ষনাৎ কান্না থামানোর জন্য যে জায়গাটাতে গিয়ে সে আঘাত পেয়েছে সেই জায়গাতে আঘাত করি।এতে বাচ্চাটা কী শিখছে তা কিন্তু আমরা মোটেও খেয়াল করি না। বাচ্চাটা শিখছে কেউ তাকে আঘাত করলে তার বিনিময়ে তাকে আঘাত করতে হয়।
* ছোট্ট বাচ্চাটাকে খুশি করার জন্য আপনি তার দুই হাতেই চকলেট বা অন্যকিছু তুলে দিচ্ছেন। এতে আমাদের বাচ্চাটা দুইহাতেই নিতে শিখে। দিতে শিখছে না।
* এরপরে বাচ্চাটা যখন হাঁটতে শিখে তখন কিন্তু সে বুঝতেও শিখে ঘরে বয়সে সবচেয়ে বড় মানুষটা কে। সে যখন দেখে আমি ওই বড় মানুষটার উপর বিরক্ত প্রকাশ করছি তখন কিছুদিন পরেই খেয়াল করবেন বাচ্চার কাছেও ওই গুরুজনটা গুরুত্বহীন হয়েপড়ে।
* এসময় বাচ্চারা অসম্ভব বাইনা করে। আমরা বাচ্চাকে খুশি করার তাগিদ নিয়ে প্রতিনিয়ত সেই চাহিদাগুলো পূরণ করতে থাকি। সামর্থ না থাকলে মারতে থাকি।
এতে বাচ্চাটা দুইটা জিনিস শিখে।এক সে যা চাই তাই পেতে হবে।দুই সে কিছু চাইলেই মার খেতে হয়। এতে বাচ্চার মধ্যে জিদ তৈরি হয়।
* স্কুলে দেওয়ার আগেই বাচ্চাকে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়া জরুরি মনেকরে তাকে সেইদিকে ধাবিত করাহয়। আমরা কী খেয়ালকরি যার/যাদের কাছে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য পাঠাচ্ছি তাঁর বা তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা আছে কিনা।
* বিজ্ঞান বলছে বাচ্চার ৮০% স্বভাব মায়ের মতো হয়। আমিও তাই মনেকরি।মাকে অনুকরণ করাটা বাচ্চাদের স্বভাব ।কারণ মায়ের সান্নিধ্য বাচ্চারা বেশি পছন্দ করে।
মায়েদের হিংসাত্মক মনোভাব,পরশ্রীকাতরতা,অতিরিক্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনও বাচ্চাদের উপর প্রভাব পরে। এক্ষেত্রে যাদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো থাকে সেইসব মায়েদের পড়াশুনার জায়গাটা বাড়ানো উচিত।
* আমরা বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠানোর সময় তাদেরকে সচেতন করি স্কুলে অন্য ধর্মের সহপাঠি থেকে খাওয়ার না খেতে। পাশে না বসতে।অন্য ধর্মের ভাষাগুলো না বলতে।
এতে বাচ্চার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাতেই অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সেই বাচ্চাদের প্রথমিক পর্যায়ে মানবিক শিক্ষাগুলো দেওয়া হচ্ছে না। বা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহমর্মিতার মনোভাব গড়েতোলা হচ্ছে না। প্রথমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবিক শিক্ষার গুনাবলি বিভিন্নধাপগুলো পর্যালোচনার বিকল্প নাই।এরফলে মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে।
* আমরা সন্তানকে সার্টিফিকেট অর্জনের নামে প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্য বানিয়ে ফেলছি। যার ফলে আমাদের সন্তানদের কাছে লড়াই করে টিকে থাকার সংজ্ঞাটাই পালটে যাচ্ছে। তাঁদের কাছে লড়াই মানে যারা শাসন করছে তাঁদেরকে মেরে ফেলা।
এতোগুলো সমস্যা নিয়ে যে বাচ্চা বেড়ে উঠে সে কিভাবে মানবিক মানুষ হবে ?
আমরা আমাদেরকে কী কখনো বলেছি, আমর বাচ্চাকে আমি আগে মানুষ বানাবো। দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা যদি ভুলের উপর তৈরি হয় তার দায় কার ?
আমার আপনার না রাষ্ট্রের?