আজ নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ

68

একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নির্বাচনের গেজেট হাতে পাওয়ার পর এই সময় ঠিক করার কথা জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট তৈরি করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিজি প্রেসে পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
২৯৮ জনকে নির্বাচিত ঘোষণার ওই গেজেট প্রকাশ হলে তাদের শপথের আয়োজন করতে গতকাল বুধবার সকালে সংসদ সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায় ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনেছি, আগামীকাল (আজ) সকাল ১১ টায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হবে’। সংসদ সচিবালয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকেও একই তথ্য জানানো হয়।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবনের নিচতলায় ‘শপথ কক্ষে’ নবনির্বাচিতদের শপথ পড়াবেন। তার আগে তিনি নিজে নিজে আইনসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এবারও তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। খবর বিডিনিউজের
রেওয়াজ অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের সদস্যরাই প্রথমে শপথ নেবেন। এরপর ক্রমানুসারে শপথ নেবেন অন্যরা।
শপথ শেষে নতুন সংসদ সদস্যরা সংসদ সচিবের কার্যালয়ের স্বাক্ষর খাতায় সই করবেন এবং একসঙ্গে তাদের ছবি তোলা হবে।
উল্লেখ্য, সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে বা স্পিকারকে অবহিত না করলে সদস্য পদ খারিজ হবে।
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯ টিতে গত রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে একটি আসন স্থগিত রেখে সেই রাতেই ২৯৮ টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২৫৯ টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮ টি। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। তাদের ধানের শীষের প্রার্থীরা মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হতে পেরেছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৯ টি, জাতীয় পার্টি ২০ টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩ টি, জাসদ ২ টি, বিকল্প ধারা ২ টি, তরীকত ফেডারেশন ১ টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১ টি।
ভোটে বাধা দেওয়া, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্ট ফলাফল বাতিল করে পুনঃভোটের দাবি তুললেও নির্বাচন কমিশন তা নাকচ করে দিয়েছে।
এদিকে দুইবার দেশ শাসন করা বিএনপির এতটা দুর্বল অবস্থায় সংসদে যাওয়া ঠিক হবে কি না- সে বিষয়ে দলের ভেতরে বিভক্তি রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে কারও কারও কথায় শপথ না নেওয়ার সম্ভাবনার কথা এসেছে।
সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৃহস্পতিবার শপথের দিনই নির্বাচিতদের ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি। তাদের শপথ নেওয়ার আহŸান জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ‘ভুল’ করেছিল, এবার আর ভুল করা তাদের উচিৎ হবে না।
আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। আবার তাদের নেতারা সরকরের মন্ত্রীসভাতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০ টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি দলগতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় এবারও তাদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার কথা। তবে জাতীয় পার্টি এখনও তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, বিরোধীদলে যাবেন কি না। তিনি বলেন, আমরা এখনও মহাজোটের অংশ হিসেবে আছি। মহাজোটের স্বার্থে যেটা করতে হবে, সেটাই করব? বৃহস্পতিবার সাংসদরা শপথ গ্রহণের পর জাপার পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যরা আরেকটি সভায় বসবেন? তারপর জাপার বিরোধী দলে যাওয়া, মন্ত্রিত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে’।
এর আগে মহাজোটের আরেক শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি (জাতীয় পার্টিকে) আমন্ত্রণ জানান, আর তারা গ্রহণ করে, তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবে। আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্য শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন হবে’।