আজ অমর একুশে ফেব্রæয়ারি বিশুদ্ধ বাংলাভাষা চর্চায় মনোযোগী হতে হবে

16

 

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহিদ দিবস। ফেব্রুয়ারি মানে বাঙালির মাথা নত না করার মাস। আপসহীন, দৃঢ়তা ও ক্ষোভ-দ্রোহের মাস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজপথে, বুকে বুলেট পুঁতে রক্তরঞ্জিত করার মাস। সর্বোপরি মহান স্বাধীনতার বীজ বপনের একুশ। ভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল বাঙালি। যা সমগ্র পৃথিবীতে এক অনন্য উদাহরণ। সে কারণে এটি জাতিসংঘের ইউনেস্কো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই সুবাধে একুশে ফেব্রæয়ারি আজ শুধু বাঙালি জাতির জন্য ভাষা দিবস নয়, বরং পৃথিবীর সকল দেশ ও মানুষের ভাষা দিবস। তাই আজ পৃথিবীজুড়ে নিজ নিজ ভাষাকে তথা মাতৃভাষাকে স্মরণ করবে সকল মানুষ অকৃত্রিম শ্রদ্ধা-ভালোবাসায়। অমর একুশের সাথে একাকার হয়ে সেই মর্মস্পর্শী সুর আ আ আ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ঐতিহ্যশালী আবেগ কথামালা আলতাফ মাহমুদের সুরে আমাদের অস্তিত্ব ও শেকড় ধরে টান দেয়া সেই অবিনশ্বর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি…’। যে গানে বাঙালি মাত্রই মাতৃত্বের টানে ও বাঁধভাঙা আবেগে উদ্বেলিত হই। সে সুর লোমখাড়া আবেগই আনেনা বাঙালি জাতীয়তাবাদে আমাদের প্রাণস্পন্দনকে আরো শানিত করে। আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি, শহীদ সালাম, জব্বার, রফিক ও বরকতসহ সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি।
স্তরে স্তরে থরোথরো ফুলে চেয়ে যায় আমাদের শহীদ মিনারগুলো। প্রভাতফেরিতে নগ্ন পদযাত্রায় মেশে সকল নবীন-প্রবীণ প্রাণ। আবালবৃদ্ধবণিতা। কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমোর, ফেরিওয়ালা, ছাত্র-শিক্ষক সর্বস্তরের লাখো কোটি বাঙালি সংস্কৃতিতে অবগাহনকৃত মানুষ। সব সড়ক এসে একুশেতে মেশে শহীদ মিনারে, আমাদের ঠিকানার বেদীতে। আলপনায় আলপনায় যেন রক্তের পলাশ রাজপথ শোভিত করে। যারা আমাদের শৃঙ্খল-পিঞ্জর ভাঙতে শিখিয়েছিল সেসব শহীদদের অম্লান বীরত্বগাথায়।
এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস যখন আমরা পালন করছি, তখন আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর চলছে, পাশাপাশি মুজিববর্ষের কর্মসূচিও চলমান। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অপরদিকে ভাষা আন্দোলনের সত্তরটি বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা বাংলাভাষার সঠিক ব্যবহারে অমনোযোগী। আমাদের বিচারালয় থেকে শুরু করে সরকারি অনেক দফতরে এবং সরকারি-বেসরকারি নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বাংলা উপেক্ষিত। সাইনবোর্ড এখনও বড়বড় অক্ষরে লেখা হয় ইংরেজিতে। এছাড়া ইলেকট্রিক মিডিয়াসহ কিছু বেসরকারি বেতারে বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা ভাষার উচ্চারণ নিয়ে রীতিমত বিব্রত হতে হয়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যেসব সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা হয়নি, তা অপসারণের কর্মসূচি নিয়েছে। এজন্য সিটি কর্পোরেশন প্রশংসিতও হয়েছে। তবে এধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এভাষা জোরজবরদস্তি বা আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার বিষয় নয়; এটি আন্তরিকতা, সচেতনতা ও দেশ্রপ্রেম থেকে জাগ্রত হতে হবে।
বাংলা আমাদের মূল প্রমিত ভাষা পাশাপাশি অসংখ্য আঞ্চলিক ও উপজাতীয় ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে অনাদিকাল থেকে। সেগুলোই প্রকৃত প্রাণের ভাষা। এসব ভাষাকে তাচ্ছিল্য করা যাবে না। সম্প্রতি এক তথ্যে জানা যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা পৃথিবীর ১০০টি ভাষার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষা ৮৮ নম্বরে। এক কোটিরও উপরে বাঙালি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। তাই আমাদের আঞ্চলিক ও বিলুপ্তপ্রায় আদিবাসিদের ভাষার যতœ নিতে হবে। সংরক্ষণে উদ্যোগ ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যাপীঠ স্থাপিত হলে ক্ষুদ্র ভাষাগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে না।
২০২২-এ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমাদের চিরায়ত বাংলাভাষা রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে। ধারণা ইংরেজি না শেখালে স্মার্ট মনে হয় না। এটি পরিত্যক্ত করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম মোবাইলে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লিখতে বেশ পটু। বাংলা এ্যাপস থাকলেও বাংলাকে উপেক্ষা করেই যাচ্ছে তারা। একুশের শপথ হোক নতুন প্রজন্মকে ইংরেজিতে বাংলা লেখাকে নিরুৎসাহিত করা হোক।