আজকের শ্রমিক রাজনীতি ও মহান মে দিবসের প্রত্যাশা

14

 

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই শ্রমিক রাজনীতি। শ্রমিক কারা ? এক কথায় বলা চলে খেটে খাওয়া মানুষ যারা বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্বশাসিত কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন শিল্প-কারখানাসহ নানান প্রকার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তরাই শ্রমিক। বিশ^ সভ্যতার ইতিহাসের দিকে নজর দিলে অগ্রগতির মূল ধারক এবং বাহক এ শ্রমিক শ্রেনির মানুষেরা। প্রাগ ঐতিহাসিক কালের ধারায় দেখা যায় যে, বিশ^ সভ্যতার গৌরবান্বিত প্রতিটি অর্জনই গড়ে উঠেছিল শ্রমিক জনতার ঘাম মিশ্রিত শ্রমের বদৌলতে। মিশরের পিরামিড যেমন নির্মাণ করেছিল সেকালের অকুতোভয় শ্রমিকেরা তেমনি আগ্রার তাজমহলও নির্মিত হয়েছিল বাইশ হাজার শ্রমিকের প্রায় বিশ বছরের শ্রমের বিনিময়ে। এভাবে সিন্ধু সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতা থেকে শুরু করে প্রতিটি সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিলেন সাধারণ শ্রমিক জনতা, যাদের অক্লান্ত ও নিরলস ত্যাগ আর শ্রমের কল্যাণে। কিন্তু যুগে যুগে দেখা যায়, এ শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরাই বেশিরভাগ অবেহেলিত ও শোষিত হয়েছিল। অথচ যাদের শ্রম আর ঘামের ফসল আজকের এ উন্নত মানব সভ্যতা, আর তারাই তাদের পেটের ক্ষুধার কষ্ট লাঘবে স্বীয় অধিকার ফিরে পেতে যুুগে যুগে হয়েছিল লাঞ্ছিত আবার কখনো কখনো দিতে হয়েছিল জীবনের বলিদান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হেগ শহরে ১৮৮৬ খ্রিঃ পহেলা মে তারিখে দৈনিক ০৮ ঘন্টার শ্রম ঘন্টার দাবীতে কতিপয় শ্রমিক জীবন বিসর্জন দিয়ে সেদিন পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমিক জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার দ্বার খুলে দিয়েছিল। পরবর্তীতে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের অধিকার সু-প্রতিষ্ঠিত করনের লক্ষ্যে আর্ন্তজাতিকভাবে গঠন করা হয় ওখঙ ( ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খধনড়ঁৎ ঙৎমধহরুধঃরড়হ), আমাদের দেশেও ওখঙ এর রীতিনীতি অনুসরণ করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন , সিবিএ, নন- সিবিএসহ বেসিক সংগঠন গুলো। উল্লেখ্য যে, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমজীবী মানুষদের হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতেন, তাদের কথা তাদের চাওয়া -পাওয়া, তাদের সুখ- দুঃখ, হাসি কান্না জাতির জনক খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতেন আর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কথা বলতেন। সে চেতনা লালন করেই জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও মর্যাদা অটুট রাখতে আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের মুখে হাসি ফুটাতে তিনি আন্তরিক। কিন্তু কথা হচ্ছে বর্তমান বাস্তবতায় শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উল্লিখিত বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলো ভূমিকা কতটা শ্রমিক বান্ধব? এ সংগঠন গুলোর নেতৃত্বে যারা থাকবেন কিংবা তদারকি করবেন তারা শ্রমিক জনতার সত্যিকারের বন্ধু হতে হবে, বিশ^স্ত অভিভাবক হয়ে কাজ করবেন এটাই মে দিবসের অঙ্গিকার হওয়া উচিত। কিন্তু আজ দেখা যায় ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন সংগঠনে গ্রæপিং, অন্তঃকোন্দল চরমে। তাহলে এ সব কেন হচ্ছে? ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করনের কুটকৌশলে কতিপয় সুবিধাভোগী উল্লিখিত শ্রমিক সংগঠন নেতৃত্বে যদি বসন্তের কোকিলের মতো কুহু কুহু রব তোলেন, আর বসন্ত পেরুলেই মৌসুমি কোকিলরা হয়ে যায় লাপাত্তা- তখন শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের অধিকার আস্তাকুড়ে নিপতিত হয়। শ্রমিক রাজনীতির মাঠে চাইনা কোন বসন্তের কোকিলদের। সত্যিকারের শ্রমিক দরদী ও নিঃস্বার্থ শ্রমিক নেতারাই আজকে সর্বস্তরের শ্রমিক নেতৃত্বে আসীন হোক এটাই মে দিবসের প্রত্যাশা। জাতীয় শমিক লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে জাতীয় শ্রমিক লীগের অগণিত বীর সেনানি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তি উদযাপন করেছি এবং মহান মুজিব শতবর্ষ উদযাপন করেছি, এরই প্রাক্কালে মহান মে দিবসের তাৎপর্যকে আরো অর্থবহ করে তুলতে সর্বস্তরের শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় শ্রমিক লীগ সদা তৎপর ও আন্তরিক ভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদি। প্রতিটি শিল্প কারখানায় শ্রকিদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে মালিক পক্ষেকে এবং শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা যথারীতি পরিশোধকরণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। যে নিরিখে আজকে সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে হতে হবে সত্যিকারের শ্রমিকবান্ধব ও দেশপ্রেমিক। ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক মেহনতি শ্রমিক জনতার।
লেখক: সভাপতি- চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগ