আজকের নির্বাচন সুষ্ঠু হোক

9

 

নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধিনে প্রথমবারের মত বেশ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিথ হতে যাচ্ছে আজ। এরমধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন ও বেশকয়েকটি জেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অন্যতম। আলোচনায় রয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও আনোয়ারা-বাঁশখালীর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অন্যতম। এর কারণ হচ্ছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। অপরদিকে বাঁশখালী ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় আত্মঘাতি কথাবার্তা বলে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। এছাড়া নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে আনোয়ারায় প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আজকের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি হবে, ভোটাররা আদৌ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই। বিশেষ করে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্বে আসার পর এটাই প্রথম নির্বাচন। তাই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক)সহ ইউপি নির্বাচনকে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই চ্যালেঞ্জ কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারবে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরেকটু দূরে তাকিয়ে বলতে চাইছেন, এই নির্বাচনের কেমন হবে; তার ছাপ পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। আবার সরাসরি না বললেও দেশের বিরোধীদলগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কুসিকসহ স্থানীয় নির্বাচনকে। বিশেষ করে কুসিকের লাফলের ওপর নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা ?
যদিও এরই মধ্যে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে টানা নির্বাচন বর্জন করে আসছে। সদ্যবিদায়ী কে এম নূরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনেকগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় কুসিক নির্বাচনেও তাদের কোন দলীয় প্রার্থী কিংবা দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অংশগ্রহণ করেননি। যদিও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে এসব নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা গেছে। যেমন নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু। দেশের ১৮টি উপজেলার ইউপি নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াতের অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিচ্ছেন ৫ জন প্রার্থী, ৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩৬ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী। এছাড়াও ২৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি দুটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুইজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সবগুলো কেন্দ্রেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। অপরদিকে বাঁশখালীতে ১৩ ইউনিয়ন পরিষদের তিনটি পদে ৭৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া আনোয়ারা, পটিয়া ও ফটিকছড়িতে কয়েকটি স্থগিত কেন্দ্রে বা নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে না হয়ে আজ নির্বাচন হচ্ছে।
আমরা লক্ষ করে আসছি কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ছাড়া ইউপি নির্বাচনে ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অনেকগুরো কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তারপরও কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীন দলকে অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। কুসিকে সবগুলো ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি প্রতিটি বুথেও ১টি করে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিরপেক্ষ হবে। দেশবাসীর মতো আমাদেরও প্রত্যাশা তিনি নিজের কথা রাখবেন। শুধু কথায় নয়, সুন্দর ও বিতর্কমুক্ত একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে সিইসি হিসেবে কাজেও তার প্রমাণ রাখবেন।
আমরা মনে করি, কুসিক সহ আজকের অন্যান্য সকল নির্বাচন হবে দেশের মানুষের কাছে নতুন এক উদাহরণ। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হোক এ নির্বাচন। এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।